পানির তীব্র সংকট; সালথায় পাট চাষিদের মাথায় হাত
পাট পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে আবাদ যোগ্য প্রায় সব জমিই তিন ফসলি। তবে পাট ও পেঁয়াজ মৌসুমে এখানে মাঠের পর মাঠ শুধু পাট আর পেঁয়াজ চোখে পড়ে।
চলতি পাট মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে পাট কাটা, পঁচানো, আঁশ ছাড়ানো, শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। তবে মৌসুমের মাঝামাঝিতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও খড়ার কারনে পাট গাছ নষ্ট, বীজ ও সারের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি, পাট পচানোর পানির তীব্র সংকটে দেখা দিচ্ছে। উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধির সাথে উদপাদন আয় কম হওয়ার কারনে পাট চাষিদের মাথায় হাত।
জানা যায়, উপজেলার আট টি ইউনিয়নে মোট চাষযোগ্য আবাদি জমি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর। চলতি পাট মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার ২শত হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে যা মোট জমির ৯০ ভাগেরও বেশি। শতকরা ৯০/৯৫ ভাগ কৃষক পাট চাষ করে থাকেন। এই উপজেলা প্রায় প্রতিটি পরিবার পাট চাষাবাদের সাথে প্রতক্ষ্য ও পরক্ষো ভাবে জড়িত।
উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ও উপজেলা সহকারী পাট উন্নয়ন করকর্তার কার্যালয় থেকে নিয়মিত পাট চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া তেমন লাগে নাই। এখনও সেই প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়।
চলতি মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া কিছুটা সহনশীল থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে অনাবৃষ্টি, খড়া ও অধিক তাপমাত্রার কারনে মাঠের পাট শুকিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হয় নাই তাছাড়া পাট গাছ খাটো খাটো রয়ে গেছে।
বীজ ও সারের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকট, বর্তমানে পাট পচানোর পানির তীব্র সংকট সব কিছু মিলে উপজেলার পাট চাষিদের উদপাদন ব্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার থেকে যে পরিমান প্রনোদনা দেওয়া হয় তা পরিমানে খুবই কম। সব কিছু মিলে পাটের বাজার দাম বৃদ্ধি না পেলে পাট চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক।
ফরিদপুর জেলা পাটচাষি সমিতির সভাপতি মোঃ মোক্তার মোল্যা বলেন, আমি প্রায় ১১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। বর্তমানে ১ বিঘা (৫০ শতক) জমিতে পাট চাষ করতে আমাদের খরচ হয়েছে ৪৫/৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে পানির অভাবে পাটের রং নষ্ট হয়ে গেলে পাটের ভাল দাম পাবো না। সেক্ষেত্রে উৎপাদনে আয় হবে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকা।
সব মিলে আমাদের লোকসান হবে। পাটের বাজার দাম বৃদ্ধি, সার ও বীজের দাম কমানো এবং মাঠ পর্যায়ে পাট চাষিদের প্রনোদনা দিলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বারী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার, কৃষিতে সরকারের ব্যাপক প্রনোদনা ও ভর্তুকি দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দূযোর্গ এর কারনে সালথা উপজেলায় এবারেও ইন্ডিয়ান পাটবীজ যারা ব্যবহার করছে সে পাটগাছ মারা যাচ্ছে।
তবে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রাসারণ প্রকল্পের আওতায় থেকে সরকার যে পাটবীজ দিয়েছে বিজেআরআই -৮ তা কোথাও মারা যাওয়ার সংবাদ পাই নাই। আমি নিয়মিত ভাবে পাট চাষিদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে এবার পরীক্ষা মুলকভাবে আট জন চাষীর মাঝে নতুন পাট পচন পদ্ধতি চালু করবো।
তাছাড়া ও আমাদের তালিকাভুক্ত চাষীদের পাটের ক্ষতি হলে তা আমরা আমাদের অধিদপ্তর সাথে করে কি ভাবে ক্ষতিপুরন করা যায় তা ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শণ সিকদার বলেন, সাধারনত পাট ১২০ দিনে কর্তন করতে হয়। এক্ষেত্রে জেআরও ৫২৪ ও বিজেআরআই তোষা পাট ৮ জাতটি ১২০ দিন হলেই কর্তন করা উচিত, কিন্তু ১২০ দিনের অধিক সময়ে কর্তন করলে আশের পরিমান ও মান কমতে পারে।
সেক্ষেত্রে জলাশয় সমস্যা বা পাট পচাতে পানির ঘাটতি দেখা দিলে রিবং রেটিং পদ্ধতিতে স্থানীয় জলাশয়ে পাট পচানো যেতে পারে। পাট অধিদপ্তর এর সহযেগিতায় রিবং রেটিং পদ্ধতি কৃষকদের সরাসরি মাঠে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
পানির সমস্যা মেটানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কৃষকদের আলোচনা ও সম্মিলিত সহযোগিতার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.