স্বপ্নপূরণের সারথি ইউএনও লিটন ঢালী -সিয়াম বিন আহমাদ
প্রথিতযশা এক ব্যক্তিত্ব, প্রভাসম্পন্ন এক দায়িত্ব যাঁর কাঁধে বিদ্যমান ও বিরাজমান। সুশিক্ষাকে যিনি ভাবেন পরিস্থিতি এবং পরাস্তের সেরা অস্র।
যিনি বিশ্বাস করেন ইচ্ছাশক্তি এবং প্রচেষ্টা থাকলে স্বপ্ন একদিন হাতের মুঠোয় ধরা দিবেই। তিঁনি মানতে নারাজ আপন গন্তব্যে পৌঁছতে দরিদ্রতার বাঁধা। যিনি মনে করেন গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষের এই কষ্টটা পাথেয় করেই জীবনের দুরতিক্রম্য পথের পথিক হয়ে ছুঁটতে হবে গন্তব্যের নিশানায়।
আমি মনে করি যারা সাধারণ পরিবার থেকে প্রস্ফুটিত হয় হাজারো কষ্টের মাঝে আপন স্বপ্ন চোখের কোণে কখনো ম্লান হতে দেয় না তারাই একদিন আমার মতো এমন সিংহাসনে বসতে পারেন।’ এ কথাগুলো আরো প্রোথিতভাবে মায়া ভরিয়ে বলছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার ইউএনও জনাব লিটন ঢালী স্যার।
ফরিদপুর আলীপুরের মোসাঃ লায়লা বেগম জীবনকে যিনি খুব সহজ করে কখনোই দেখেননি। ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাশ করতে না করতেই পরিবারের চাপে যার আঁচলে গুছতে হয় নতুন সংসারের চাবি। দায়িত্বটা প্রশস্ত হবার আগেই হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙে যায় লায়লা বেগমের সাজানো সংসার। দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে চড়ুই পাখির মতো একজনের অনুগ্রহে লায়লা বেগম দিন গুনতে থাকেন, একটা নতুন ভোরের।
অধুনা দ্রব্যসামগ্রীর এমন দামের কাছে শুধু লায়লা বেগমই নয় সমাজের প্রায় সকল শ্রেণির মানুষেরই বেগ পোহাতে হচ্ছে। লায়লা বেগমের দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে তাই খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। লোকমুখে বিষয়টা জানতে পারেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ছায়ানীড়’ এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ইনামুল হাসান মাসুম। অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে যার মন সর্বদা ব্যাকুল।
যুগে-যুগে শতাব্দীতে পৃথিবীকে গ্রাস করতে আসে দুর্ভিক্ষ, কলেরা, করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গুর মতো ভয়াল থাবা। এই সময় সমাজে যাঁরা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেন, পাথেয় যোগান। কোমল হাতের আঙ্গুলটা শক্ত করে ধরে দাঁড় করিয়ে দেন আগামীর পথে। স্বপ্ন দেখান নীল আকাশ ছোঁয়ার।
এমনই একজন মানুষ এই ইনামুল হাসান মাসুম। সারা পৃথিবী যখন নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত, অন্ধকারে সুপ্ত। মানুষকে চিনিয়ে দিয়েছিল কে প্রিয়জন আর কে শুধুই প্রয়োজন? নিজের জীবনসঙ্গীও কতটা অলীক করোনাসনোগ্রাফির মাধ্যমে পৃথিবী জ্ঞাত হয়েছিল। নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল করোনারোগে আক্রান্ত স্বামী বিদেশে থেকে ফেরার খবর শুনে। কিন্তু এই কঠিন সময়ে মরণব্যাধী করোনাকেও ভয় পায়নি এই মানবতার ফেরিওয়ালা ইনামুল হাসান মাসুম।
অসহায় দরিদ্র মানুষের ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, রাতের আঁধারে দুয়ারে দুয়ারে ওষুধ বিতরণ। এমনসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পার করেছেন করোনাকালীন হিংস্র সময়টা। শুধু করোনাকালীন সময়ই নয়—বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো, কারো ঘরবাড়ি পুড়ে গেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
প্রতিবেশী কে না খেয়ে আছে মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিতে পারাই আজ তার স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এভাবেই আজীবন অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে অনাহারী মানুষের কচি ঠোঁটের হাসি দেখে সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হতে চান তিনি।
অনেকেই আবার তাকে চিনেন তাবলীগ নামে। তাবলীগের কাজই যেন মানবসেবা করা। তাই অনতিবিলম্বে লায়লা বেগমের পাশে দাঁড়ায় ছায়ানীড় পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ ইনামুল হাসান মাসুম। তারই প্রচেষ্টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও লিটন ঢালী লায়লা বেগমের দুই মেয়ের ফরম ফিলাপের জন্য নগদ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
অন্তিমবেলা সহায়-সম্বলহীন থাকা অসহায় লায়লা বেগম নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আমার দুটি সন্তান নিয়ে অসহায়ের মতো দিন অতিবাহিত করেছি। না খেয়েও রাত কাটিয়েছি। এমনো রাত পার হয়েছে ক্ষুধার তাড়নায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ছায়ানীড় পরিবারের মাধ্যমে আমি আজ যে সহযোগিতা পেলাম তা কখনোই ভুলবার নয়। আমি শ্রদ্ধেয় লিটন ঢালী স্যার এবং ছায়ানীড় পরিবারের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।’
কানাইপুর প্রতিনিধি
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.