আলফাডাঙ্গায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে দেশি মুরগি উৎপাদন প্রকল্পের ৮ লক্ষ টাকা উদাও
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে দেশি মুরগি উৎপাদন প্রকল্পের (LDDP) ৪০ টি দেশি মুরগি ঘর নির্মানে আট লক্ষ টাকা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কর্মচারীর পকেটে এবং দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
উপজেলায় বুড়াইচ ইউনিয়নে হেলেঞ্চাহাটি কঠুরাকান্দী ওয়ার্ডে দেশি মুরগী উৎপাদন পালনে ৪০ খামারি সমিতির সদস্যদের ভয়ভীতি দিয়ে চেকে টাকা উত্তোলন এবং পরে অফিসে ডেকে সকল সদস্য কাছ থেকে ঐ টাকা ফেরত নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পকেটে রাখে , নিয়মবহির্ভূত অফিসের লোক দিয়ে ঘর নির্মাণ,ঘর তৈরীতে নিম্নমানের মালমাল সরবারহ,
নকশা অনুযায়ী ঘর তৈরী না করা, সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ এবং কোন সদস্য অনিয়মের অভিযোগ করলে তাকে সমিতির সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেন প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং অভিযোগ করেন মুরগী পালন খামারি সদস্যরা ।
সরজমিনে বেশ কিছু খামারি (শিমুল,তাসলিমা,নারগিস) সদস্যদের অভিযোগে জানা যায়, নারীদের আত্মকর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অর্থায়নে নারী খামারিদের স্বাবলম্বী করতে আধুনিক দেশি মুরগী উৎপাদন পালনে ঘর তৈরীতে প্রত্যেক খামারিকে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
এই প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চাহাটি ও কঠুরাকান্দিতে ৪০টি ঘর তৈরীর কাজ শেষের দিকে।
৪০ জন সদস্যের মধ্যে আধুনিক দেশি মুরগীর উৎপাদন ঘর তৈরী করতে প্রত্যেক সদস্যকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা গত জুন মাসে প্রত্যক মুরগী খামারি সদস্যদের মাঝে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্মকর্তা ডা. ভবেন বাইন সাক্ষরিত ২০ হাজার টাকার একটি ক্রস চেকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।
চেক বিতরণের পরে ঐ প্রকল্প কর্মকর্তা ও দ্বায়িত্বরত ডা: আব্দুস সালাম এবং প্রোজেক্ট ফিল্ড সহকারী (এল এস পি) আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে প্রজেক্ট থেকে বাদ দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শনের মধ্যামে এক প্রকার জোর পূর্বক খামারি সদস্যদের দিয়ে ক্রস চেকে সাক্ষরের মাধ্যমে সোনালি ব্যাংক থেকে ২০হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
বরাদ্দের ২০ হাজার টাকা দিয়ে খামারি সদস্যরা নিজেরাই নকশা অনুযায়ী মুরগীর ঘর তৈরী করার নির্দেশনা থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নির্দেশে প্রকল্প কর্মকর্তা কথিত স্হানীয় প্রভাবশালী ইউনিয়ন প্রতিনিধি( এলএফসি) মো. সামাদ মোল্লাকে দিয়ে ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ করে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঘর তৈরী করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছে সদস্যরা। যার ফলে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: ভবেন বাইন ও একই অফিসে কর্মরত দেশি মুরগি উৎপাদন প্রকল্প কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সালামের দুর্নীতি ও হরিলুটের কারনে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মুরগী পালন নারী খামারিদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রকল্প। ইউনিয়ন প্রতিনিধি(এলএফসি) মো. সামাদ মোল্লার মুঠোফোন০১৭৫৪৪১১৫১০ জানতে জাইলে, এ বিষয়ে কোন তথ্য ও অভিযোগের উত্তর দিতে রাজি নন।প্রকল্পে স্যারদের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালামের কাছে মুঠোফোন (০১৮৮৮৩৯৫৫৯৫) কলে জানতে চাইলে, প্রকল্প কর্মকর্তা টাকা উত্তোলন করিয়ে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন বরাদ্দের টাকা আমাদের কাছে না নিয়ে নিলে সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করে ফেলতে পারেন তাই আমরা প্রত্যেক সদস্য হতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ঘর বানিয়ে দিয়েছি। এখনো কিছু কাজ চলমান।
এই প্রকল্পের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার এখতিয়ার প্রকল্প কর্মকর্তার আছে কিনা এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: ভবেন বাইনের কাছে সরজমিনে ভিডিও বক্তব্য দিতে বললে তিনি ভিডিও বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজ কক্ষের পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী কক্ষে গিয়ে প্রথমে অভিযোগকে মিথ্যা বলেন, পরে প্রকল্প কর্মকর্তা ৪০ জনের মধ্যে কিছু খামারি সদস্য হতে টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেন এবং সবশেষ আবারো অনিয়মের অভিযোগকে সম্পুর্ন মিথ্যা বলে এড়িয়ে যান। বক্তব্য দেওয়ার এসময় এই কর্মকর্তাকে বেশ অস্থির এবং তাড়াহুড়ো করতে দেখাচ্ছিলো।
উপজেলা চেয়ারম্যান একে এম জাহিদুল হাসানের সাথে অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে বলেন, অভিযোগ শুনেছি তবে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি, এই উপজেলায় কোন অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী থাকতে পারবে না, তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হক মুঠোফোন বলেন,অভিযোগের কথা আপনার কাছ থেকে শুনলাম,তবে ঘর গুলো সঠিক নিয়মে হচ্ছে।অন্যান্য উপজেলার চাইতে ভাল হচ্ছে।তবে অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
প্রকল্পের দূর্নীতি প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস মুঠোফোন(০১৭১১৯৮৮৪২০) বলেন টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ( রবিবার) সকালে ফোন দিয়েছিলাম জেনেছি টাকা ফেরত দিয়েছে।
আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে