ভাঙ্গায় গৃহহীন নিঃসন্তান বিধবা এক বৃদ্ধা মহিলার দায়িত্ব নিলেন এসিল্যান্ড-মাসুদুর রহমান
দুঃস্থ- অসহায়ের পাশে সর্বদা প্রশাসন আছে- জেলা প্রশাসক ফরিদপুর। পনে দুই শতাংশ স্বামীর ভিটা তাও অন্যের দখলে এমন এক গৃহহীন নিঃসন্তান বিধবা এক অসহায় বৃদ্ধা মহিলার দায়িত্ব নিলেন ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান।
অসহায় বৃদ্ধা গোলাপজান বেগম(৭৫) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের ভরিলহাট গ্রামের মৃত্যু মুনসুর বেপারী ওরফে গেদার স্ত্রী। স্বামী অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করায় তার উপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার সন্তান সন্ততি কিছুই নাই তার। এক টুকরা(১.৭৫ শতাংশ) জমি থাকলেও চুন্নু খলিফা দখল করে রাখেন বলে গোলাপজান জানান।
মাটির সঙ্গে নুয়ে পড়া একটি ছাপড়ায় মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করেন। সেটিও অন্যের সিমানায় পড়ে থাকায় তার ছাপড়াটি দাঁড় করাতে দিচ্ছে না প্রতিবেশী আক্তার খলিফা। গোলাপজান মানবেতর জীবন যাপন করছেন একটি ভেঙ্গে পড়া ছাপড়ার নিচে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই এলাকায় খাস জমি পরিদর্শনে গিয়ে চোখে পড়ে ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের চোখে।
তিনি ওই অসহায় বৃদ্ধা মহিলাকে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি গোলাপজান বেগমের মানবেতর জীবনযাপনের লোমহর্ষ বর্ণনা প্রত্যক্ষভাবে শুনে তিনি(মাসুদুর রহমান ) দায়িত্ব নেন তার পনে দুই শতাংশ জমি দখল মুক্ত করে একটু মাথা গোজার ঠাই নির্মাণ করে দেওয়ার। গোলাপজানের ভরণ পোষণের জন্য দায়িত্ব দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান রেজাউল মাতুব্বরের উপর।
গোলাপজান তার মানবেতর জীবনযাপনের কথা শুনান, তিনি বলেন, আপনারা একটু আওগিয়া দেখেন পায়খানা প্রসাব খানা নাই কি অবস্থা? কেদায় পানিতে ওইভাবেই রাতভর বসে থাহি। মশারি কয়েল কিছুই নাই তার। টয়লেট আসলে কি করেন,উত্তরে বৃদ্ধা বলেন, এই দেহেন দুইটা লাডি এই লাডি দিয়া ওই জঙ্গলের পাশে যাই।
গোলাপজান আরো বলেন,আমারে ওই ঘরের চুন্নু বলেছিল তোমার ভিটা আমাকে দলিল করে দাও আমি তোমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাওয়াবো পরাবো। আমি দেখলাম আমার কেউ নাই আমি যেন স্বামীর ভিটায় থাইহা মরতে পারি তাই আমি রাজি হইলাম।
তারা ঢাহা থাহে আমারে ৪ মাস পর্যন্ত তিন আজার করে টাহা দেছে আমি পাক সাক করে খাইছি। গেছে বছর আমার ভিটায় ওরা ঘর উডাইল। ভিডাও দখল হয়ে গেল এরপর আমারে আর খাবার দেলো না, আমি ৮ দিন পর্যন্ত কান্দাকাটি কইরা না খাইয়া না নাইয়া মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে গেলে কেউ একমুঠ খাবার দেলো না, তারা কয়, কেন তোমারে খাবার দেবো? তোমার জায়গা দিয়া দিছো খলিফার ছাওয়াল গো তারাই তোমারে খাবার দেবে।
এভাবেই আমি খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইতেছি। পরে কান্দাকাটি কইরা বেড়াইলে গ্রামের লোকজন টাকা পয়সা ও খাবার দিয়া বহু দেখছে। আমার শরীর ব্যথা, পা ব্যথা নড়াচড়া করা পারিনা হাতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে, বহু ওষুধ খেতে হয়। অন্যরা এসিল্যান্ড এসেছেন বলে তাকে জানালে তিনি আত্কে ওঠেন। এ সময় এসিল্যান্ড তাকে জড়িয়ে ধরেন সান্তনা দেন।
এ ঘটনায় এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, গোলাপজান বেগম নিঃসন্তান বিধবা এক অসহায় বৃদ্ধা নারী, তিনি এক মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তার ভিটা টুকু অন্যেরা দখল করে নিয়েছে। আমি মর্মাহত হয়েছি, বৃদ্ধা মহিলার জমি বের করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এবং তার সুন্দর করে বাঁচার জন্য ডিসি স্যারের সঙ্গে আলাপ করে একখানা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তার তদারকির জন্য সরকারি সকল সুবিধা তাকে দেয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় কালামৃধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল মাতুব্বর বলেন, অসহায় বৃদ্ধা মহিলার জন্য আমি সকল সুবিধা দিব। অন্যদিকে ভরিলহাট গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল জানান, বর্তমান যুগে ওই বৃদ্ধা মহিলার মত দুঃখী মানুষ দুনিয়ায় আর নাই। আপনারা যদি কিছু করে দিতে পারেন আল্লাহ আপনাদের প্রতি খুশি হবেন আমার বিশ্বাস।
ভাংগা প্রতিনিধি
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.