রাতে দাঁত কিড়মিড় অভ্যাস বন্ধ করুন


ঘুমের মধ্যে দাঁতে দাঁত ঘষার কারণ হতে পারে মানসিক চাপ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ব্রাক্সিজম’ হল এমন একটা অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি তার দাঁত পিষে, কিটমিট করে ও ঘর্ষণ সৃষ্টি করে।
ঘুমের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা হয় বলে এটা ‘স্লিপ ব্রাক্সিজম’। তবে জেগে থাকা অবস্থাতেও এমনটা হতে পারে যা ‘অ্যাওয়েইক ব্রাক্সিজম’ নামে পরিচিত।
এই বিষয়ে ভারতের, ‘ওরাল ইমপ্লান্টোলজিস্ট’য়ের ডেন্টাল সার্জন ও কসমেটিক ডেন্টিস্ট ডা. নিরালি প্যাটেল হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যদিও মাঝে মধ্যে দাঁত দাঁত পেষা পিষা বা কিটমিট শব্দ করা ক্ষতিকর নয়। তবে দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে দাঁতের ক্ষয়, চোয়াল ব্যথা, মাথা ব্যথা ও ঘুমের ব্যঘাতসহ নানারকম অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।”
কারণ:-
নানান কারণে দাঁত কিটমিট বা পেষার সমস্যা হতে পারে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে দাঁতে দাঁত পেষার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অস্বাবাবিক কারণ, অসম দাঁত বা অথবা ঘুমের ঘোরে কামড় লাগার ফলে এমনটা হতে পারে।
দাঁতে কিটমিট শব্দ করার অন্যতম কারণ হতে পারে ঘুমের সমস্যা, যেমন- স্লিপ অ্যাপনিয়া।
ডা. নিরালি বলেন, “ইচ্ছা করে দাঁত পিষে এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। ঘন ঘন দাঁত পেষণের ফলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। দাঁত সুস্থ রাখতে প্রথমে এই সমস্যার গোড়া খুঁজে বের করতে হবে।”
দাঁতের পেষণের কয়েকটি কারণ হল-
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ, ভারসাম্যহীন বা ভুল কামড়, অসম ভাঙা বা কম দাঁত থাকা, ঘুমের সমস্যা যেমন- স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অনিদ্রা, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টিসাইকোটিক্স ওষুধ গ্রহণ, পারকিনসন’স ও হান্টিংটন’স’য়ের মতো স্নায়ু রোগ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন অ্যালকোহল ও ধূমপান করা।
লক্ষণ:
রাতে দাঁত পিষণ হয় কিনা তা বোঝার একমাত্র উপায় হল ব্রাক্সিজম’য়ের লক্ষণ বোঝা।
এমন কয়েকটি লক্ষণ হল:
দীর্ঘমেয়াদী মাথা ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা বা শক্তভাব, ঘুমের মধ্যে নাক বন্ধ হয়ে আসা ও নাক ডাকা, দাঁতের সংবেদনশীলতা, কানে ব্যথা, ঘুমে ব্যঘাত, মুখে ব্যথা, মাড়িতে সমস্যা, জিহ্বার জড়তা।
দাঁতের পেষণ কি অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়?
যাদের নিয়মিত দাঁতের পেষণের সমস্যা হয় তাদের দাঁতে ফাটল, দুর্বলতা বা দাঁতের ক্ষতি হয়ে থাকে। এমন সমস্যায় আংশিক বা সম্পূর্ণ দাঁতের ব্রিজ, ক্রাউন, ইমপ্ল্যান্ট ও রুট ক্যানেল থেরাপি ইত্যাদি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
পেষণ দাঁতের ক্ষতি এমনকি দাঁত হারানোর কারণ হতে পারে। এটা চোয়ালের ওপর প্রভাব ফেলে সম্পূর্ণ চেহারায় পরিবর্তন আনতে পারে।
ব্রাক্সিজম বা দাঁতের পেষণ বন্ধ করার উপায়:
ক্যাফেইন বাদ দেওয়া: উত্তেজক উপাদান যেমন- কফি, চকলেট, অন্যান্য ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় বাদ দেওয়া উপকারী। এগুলো দাঁতের পেষণ সৃষ্টিকারী পরিবেশ তৈরি করে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা বা পরিমিত গ্রহণ করা দাঁতের জন্য উপকারী।
অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা: অ্যালকোহল ও তামাক গ্রহণ করতে হবে পরিমিত মাত্রায়। কারণ এগুলো গ্রহণ করার ফলে ধীরে ধীরে দাঁতের অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
গিলে খাওয়া যায় না এমন খাবার বাদ দেওয়া: অযথা চিবানোর অভ্যাস থাকলে হাতে থাকা কলম, পেন্সিল ও অন্যান্য সামগ্রী কামড়ানো হয়, এটা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
এমন অভ্যাস থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চিনিমুক্ত চুইংগাম বা দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য নকশা করা ‘চিবানো খেলনা’ চিবানো যেতে পারে। এগুলো দাঁতের পেশিকে শক্ত করতে সহায়তা করে।
চোয়াল ও মুখের পেশির ব্যায়াম: চোয়াল ও মুখের পেশিকে আরাম দেয় এমন ব্যায়াম অনুশীলন করা উচিত।
চোয়াল মালিশ, উষ্ণ চাপ প্রয়োগ, স্ট্রেচিং ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আরাম পাওয়া যায় এমন ব্যায়ামসহ সাধারণ ব্যায়াম করা উপকারী।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: ব্রাক্সিজম’য়ের অন্যতম কারণ মানসিক চাপ। মানসিক চাপ কমাতে শরীরচর্চা, ধ্যান, যোগাসন, গভীর শ্বাস অনুশীলন এবং শখের কাজ করা উপকারী।
এছাড়াও, দন্ত বিশেষজ্ঞ বা মানসিক চাপ কমাতে প্রশিক্ষণ দেন এমন কারও পরামর্শ গ্রহণ করা এক্ষেত্রে উপকারী।
আরাম করা: প্রতিদিনের জন্য একটা আরামদায়ক রুটিন তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে। মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন দেখার বদলে গরম পানিতে গোসল করা, হালকা মিউজিক শোনা বা বই পড়া আরাম অনুভূত হয়।
দাঁত পেষণ কমানোর জন্য রয়েছে নানান রকম থেরাপি, ব্যায়াম ও চাপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এর প্রতিকার করা যেতে পারে।
লাইফ স্টাইল/দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.