প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে মোকা-দৈনিক ভোরের বার্তা
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে মোকা, ১৭০ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে মোকা! কক্সবাজার, চট্টগ্রামে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা উপকূলের সঙ্গে দূরত্ব কমছে ঝড়ের।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই মোকার প্রভাব পড়বে কক্সবাজার এবং উপকূলীয় এলাকায়। প্রতীকী ছবি।আবহাওয়া দফতরের এক শীর্ষ কর্তা মহম্মদ বজলুর রশিদ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-কে জানিয়েছেন, মোকার সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।
সেই গতি উঠতে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। প্রতীকী ছবি।ঝড় যত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, সমুদ্র ততই উত্তাল হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের প্রভাবে ৮ থেকে ১২ পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফলে পায়রা এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর-সহ উপকূলীয় এলাকাগুলিতে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, মোকার তাণ্ডব এবং ধ্বংসলীলা চলবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা-সহ সংলগ্ন দ্বীপ এবং চরগুলিতে।
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে মোকা। অন্য দিকে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়।
এ ছাড়াও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এই ঝড়ের অবস্থান ৭৯ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে। যে গতিতে মোকা এগোচ্ছে উপকূলের দিকে, অনুমান করা হচ্ছে রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার এবং উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করবে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকেই কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন এবং উপকূলীয় এলাকাগুলিতে মোকার প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মোকা যতই উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ততই আবহাওয়ার পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকেই তাই কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে কক্সবাজার-ঢাকা বিমান চলাচল বন্ধ। বিমানবন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, কক্সবাজার-ঢাকা রুটে প্রতি দিন ৪০টিরও বেশি বিমান চলাচল করে।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওই রুটের সমস্ত উড়ান বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং বরিশালে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। আর সে কারণে পাঁচটি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
যে সব অঞ্চলে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলি হল— কক্সবাজার, বান্দারবন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল। মোকা আছড়ে পড়ার আগেই মৎস্যজীবীদের উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ট্রলার মালিক সমিতি জানিয়েছে, শনিবার সকালের মধ্যে ৪,৩০০ ট্রলার পারে ফিরেছে। ৪০০ ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি রয়েছে। সেই ট্রলারগুলিও শনিবার দুপুরের মধ্যে ফিরে আসবে বলে দাবি ট্রলার সমিতির।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্তা মিজানুর রহমান জানান তাঁদের মূল নজর থাকবে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের উপর। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে ৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন।
স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ত্রাণশিবিরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক সপ্তাহের মতো খাবারও মজুত করে রাখা হয়েছে। দেড় হাজারেরও বেশি ত্রাণশিবির তৈরি করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বঙ্গোপসাগরের ‘শিরে’ ঘূর্ণিঝড় মোকা থাকলেও তার কোনও প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না বলেই জানিয়েছিলেন আবহবিদরা।
বিগত কয়েক দিন ধরেই প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছিল পশ্চিমবঙ্গ। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আপাতত শনিবার থেকে বৃষ্টির স্বস্তি দক্ষিণবঙ্গের মানুষ উপভোগ করতে পারবেন বেশ কয়েক দিন। পর পর তিন দিন বেশ খানিকটা নামবে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলার তাপমাত্রাও। বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতে।
বঙ্গোপসাগরের বুকে জন্ম নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোকা। যা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে থেমে থাকেনি। বঙ্গোসাগরের বুকে পরাক্রম বাড়িয়ে তা পরিণত হয়েছে প্রচণ্ড শক্তিশালী মারাত্মক প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়ে।
যা প্রবল বেগে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলের দিকে। সেই আবহে পশ্চিমবঙ্গেও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের কী ভাবে রক্ষা করা যায়, সেটাই এখন চিন্তা বাংলাদেশ প্রশাসনের।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পিছপা হয়নি তারা। তবে, স্থলভাগে প্রবেশ করলে ঝড়ের গতি কী রকম থাকে, তার উপরই সব নির্ভর করছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে