ঘোড়ার পিঠে ভিক্ষার ঝুলি লালু মিয়ার-প্রতিবেদন শফিক খান


প্রবাদ আছে ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ হাঁটিয়া চলিল কিচুদুর গিয়া মর্দ রওয়ানা হইল। পঙ্গতি টি মানুষ নানান ভাবে ব্যাখা দিলেও ভোলার বোরহান উদ্দিনে ঘটেছে ঠিক উল্টো। ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিলো।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ ভিবিন্ন উপায় অবলম্বন করলেও ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার চরগঙ্গাপুর গ্রামের জালু মিয়া (৫৫) জীবিকার অন্বেষনে কাঁধে নিয়েছেন ভিক্ষার ঝুলি।
জালু মিয়া ঘোড়ায় চড়ে উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে নয় ঘোড়া দেখিয়ে জীবিকার জন্য সহায়তা কামনা করেন ৷ শারিরীক অসুস্থতার কারনে শরীরে ভাঁজ পরলো জালু মিয়ার। কোন কাজ করতে পারেন না জালু মিয়া। নেই কোন সহায় সম্বল, রোগসোগে ভোগে বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না তিনি। তাই বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি। হাটতে পারেন না বলে তাকে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে হয়।
প্রায় ৪ বছর আগে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকায় একটিটি কিনেন ৷ সেই ঘোড়ায় চড়েই তিনি চলে যায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে। ঘুরে ঘুরে মানুষকে ঘোড়া দেখিয়ে সহযোগিতার হাত পাতেন তিনি। প্রতিদিন ঘোড়া দেখিয়ে ভিক্ষা করে তার আয় হয় ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো। এতে ঘোড়ার খাবার কিনার পর কোন রকম চলছে তার সংসার জীবন ।
জালু মিয়া বোরহান উদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের দরুন গ্রামের মৃত আঃ মতলেব এর ছেলে। তার ৪ ভাই ও ১ বোন ৷ এক সময় সে ওই গ্রামের পৌত্রিক বাড়ীতেই থাকতো ৷ কিন্তু কোনো জায়গা জমি না থাকায় একই ইউনিয়নের পাশের চর গঙ্গাপুর গ্রামে বোনের বাড়ীতে চলে আসেন ৷ সেখানে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন আর নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি করেন ঝুপড়ি ঘর ৷ বৃষ্টি হলে সারা ঘর দিয়ে পানি পড়ে ৷ রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই থাকেন জালু মিয়া ৷
নির্দিষ্ট সময়ে অনেক আগে বিয়ে করেন জালুমিয়া। জালু মিয়ার ঔরষে একটা ছেলে সন্তান জম্ম নেন ৷ ছেলের জম্মের কিছু দিন পরে মারা যায় জালু মিয়ার শ্ত্রী ৷
ভাগ্যের কি নির্মম পরহাস কিচুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে সেই ছেলেটিও মারা যায় জালু মিয়ার ৷ জৈবিক চাহিদা ও সামাজিক চিন্তাকরে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হন জালু৷
কিন্তু জালুর দ্বিতীয় শ্ত্রী ঘরে কোনো সন্তান জম্ম নেন নাই ৷ তাই তারা স্বামী স্ত্রী দুজনই ভিক্ষা করে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছেন ৷ জালু মিয়া বলেন আমার কোনো জায়গা জমি নেই ৷ পরিবারেও সচ্ছল কেউ নাই ৷ তাই পাশের গ্রামে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি ৷ বৃষ্টি আসলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে ৷ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি ৷ ঘোড়াটাই আমার সম্বল । ঘোড়াটা আছে বলেই ঘরে চুলা জ্বলে।’
আগে মানুষের দৈনিক মজুরির কাজ করে খাইতাম ৷ এই বয়সে এখন কেউ কাজ দেয় না ৷ তাছাড়া কাজ করার ক্ষমতাও শরীরে নেই। কোন সহায় সম্ভলও নেই ৷ তাই বাধ্য হয়েই এ পেশাতে আসতে হয়েছে আমার। শেষ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে থাকার জন্য তাকে যেন একটি সরকারি ঘর দেয়া হয় এমন দাবি করছেন তুলেন জালুমিয়া৷
তার প্রতিবেশীরা জানান, জালু দম্পত্তির নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই, কর্ম করে তাদের দেখভাল করার মত কোন সন্তান সন্ততিও নাই ৷ সে তার স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় এখানে বাস করছেন ৷ তাই ভিক্ষা করেই ক্ষেতে হয় তাদের ৷ তারা যে ঘরে বসবাস করেন সেটা কোন মানুষ বসবাস করার মতো জায়গা না ৷
সাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মৃধা জানান, সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি তাকে সহযোগীতা করি ৷ সে যাতে একটি সরকারি ঘর পায় তার ব্যবস্থা করা হবে ৷
বোরহান উদ্দিন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন বলেন আমরা ভিক্ষুক জালু মিয়ার খোঁজ নিয়ে তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো । তবে সরকারি ঘরের পরবর্তী প্রকল্পে জালু মিয়ার জন্য ঘরের ব্যাবস্থা করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
শফিক খাঁন, ভোলা
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.