ভারতের পিঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করবে না বললেন কৃষি সচিব-দৈনিক ভোরের বার্তা
ভারত কথা দিয়ে কথা না রাখার ফলে বাংলাদেশে পিয়াজ প্রবেশ করবে না। গত বছর চুক্তি থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ চুক্তি ভঙ্গ করে পিয়াজ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
তখন আমরা তুরস্ক সহ অন্যান্য দেশ থেকে বেশি মূল্য দিয়ে পিয়াজ সংগ্রহ করেছি। এবছর ভারত, বাংলাদেশে পিঁয়াজ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে। আমাদেরকে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপর অনেক প্রেসার ক্রিয়েট করা হয়েছে।
বুধবার (২২ মার্চ) সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চান্দ্রা ইউনিয়নের লোহারদিয়া গ্রামে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মানসম্পন্ন মসলা বীজ উৎপাদন’ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিতরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বরিশাল- ফরিদপুর (কঃ গ্রোঃ) জনের আওতাধীন ফরিদপুরস্থ বীজ উৎপাদনকারী চুক্তিবদ্ধ চাষীদের বীজ ফসলের মাঠ পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা বলেছি ভারতের পেঁয়াজ ঢুকলে আমাদের দেশের কৃষক পিয়াজের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে, ক্ষতিতে পড়বে। তখন কৃষকেরা চাষাবাদে তাদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এবার বাংলাদেশ পিয়াজ না নেওয়ার জন্য দুই, তিন টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশে ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশ বিগত দিনে ২৫লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। ১০ লক্ষ মেট্রিক ঘাটতি ছিল। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক টুকরা জমি ও যেন অনাবাদি না থাকে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার কথা কৃষকেরা শুনেছে যেমন শুনেছিল বঙ্গবন্ধুর কথা। মত বিনিময়ের আগে চাষীদের পিয়াজবীজ চাষ বাস্তবে দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং ফরিদপুরের বীজ একটি ব্রান্ড নামে পরিচিত লাভ করবে বলে উল্লেখ করেন।
সেসময় বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, ডিএইর মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বিএডিসির পরিচালক পর্ষদের সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান, বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ দে, ডিএইর পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, বিএডিসির প্রকল্প পরিচালক জামিলুর রহমান প্রমুখ।
প্রকল্প পরিচালক জামিলুর রহমান বলেন, ফরিদপুর জেলায় বিএডিসির আওতাধীন পাঁচটি স্কীম রয়েছে। এদের মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় লোহারদিয়া ও চৌকিঘাটা গ্রামে দুটি স্কীম রয়েছে। লোহারদিয়া গ্রামে ৬ জন চুক্তিবদ্ধ কৃষক ১৬.৬৫ একর জমিতে পিয়াজবীজ চাষ করেছেন। ফরিদপুর জেলা থেকে ১৩.৫ মেট্রিক টন পিয়াজবীজ সংগ্রহ করবেন সরকার।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ থেকে গ্রীষ্মকালীন উন্নত মানের পিয়াজের বীজ (এন ফিফটি থ্রী) উদ্বুদ্ধ করনের জন্য কৃষকের মাঝে ফ্রি বিতরণ করেছি। এতে করে আমাদের বাংলাদেশে পিয়াজের ঘাটতি থাকবেনা বলে আশা করছি। বারো মাসেই পিঁয়াজের চাষ হবে। পরে পিঁয়াজ চাষীরা তাদের পিয়াজ চাষের উপর বিভিন্ন ফর্মুলা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পিঁয়াজচাষী সহ ব্যবসায়ীরা। ভাঙ্গা বাজারের পিঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. মাসুদ শেখ বলেন, দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে উঠছে সেই কথা বিবেচনা করে ও দেশের কৃষকদের পেঁয়াজের বাজার মূল্য সঠিক পাওয়ার জন্য ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে এতে করে দেশীয় কৃষকরা তাদের চাষকৃত পেঁয়াজের সঠিক মূল্য পাবেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছি আমরা।
উপজেলার আলগী ইউনিয়নের বালিয়াচরা গ্রামের পিঁয়াজচাষী মামুন শেখ বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সালথা, নগরকান্দা উপজেলা পিঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর পিঁয়াজ চাষে কিটনাষক, পানি খরচ, আগাছা পরিষ্কার, পিঁয়াজের হাই ভাঙ্গা ইত্যাদিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই ভাবে আমরা (কৃষক) মূল্য পাই না।
সঠিক মূল্য পাওয়ার জন্য ভারতের পিঁয়াজ স্থায়ীভাবে আমদানী বন্ধ করা সহ পিঁয়াজ ক্রয়ের সরকারি একটি মূল্যধার্য্য করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি>
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে