ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী শীতার্তদের বাড়ি বাড়ি কম্বল ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ -ছায়ানীড় ফাউন্ডেশন
মাঘের একেবারে মাঝামাঝি। শীত জাঁকিয়ে বসেছে বেশ ভালোভাবেই। শীতে অসহায় হয়ে পড়েন দেশের অস্বচ্ছল মানুষ। কোনো রকম শীতবস্ত্র গায়ে দিয়ে রাত কাটিয়ে দেন তারা।
বিশেষ করে গ্রামঞ্চলের এসব মানুষ পড়েন মহাসংকটে, শহরের মানুষের মতো কম্বলের আশায়ও তাকিয়ে থাকেন না তারা। কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনবান্ধন ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন এর সঠিক দিকনির্দেশনা ।
এবং ছায়ানীড় সংগঠন এর প্রতিষ্ঠা নির্বাহী সদস্য মোসাঃ জেসমিন আক্তার (পাখি)’র সু-পরামর্শ অনুযায়ী ফরিদপুরের কানাইপুরের বিভিন্ন গ্রামঞ্চলের এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি কম্বল নিয়ে ছুটছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ছায়ানীড় ফাউন্ডেশন’।
ছায়ানীড় সংগঠনের মাস ব্যাপী কম্বল বিতরণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শীতার্তদের জন্য উন্নতমানের শীতবস্ত্র (কম্বল) উপহার নিয়ে অনেক পথ পেরিয়ে নিজেই কম্বল নিয়ে হাজির হয়েছেন ছায়ানীড় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ ইনামুল হাসান মাসুম, এতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩০০ পরিবারকে ছায়ানীড় পরিবারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে কম্বল তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
শীতার্ত মানুষের মানুষের কষ্ট নিবারণে শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ৯টা পর্যন্ত ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের যাচাই-বাছাই কৃত অস্বচ্ছল শীতার্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষদের মাঝে কম্বল নিয়ে ছুটে যান ছায়ানীড় সংগঠনের সদস্যরা।
এ সময় তারা শারীরিক প্রতিবন্ধী নাঈমা সুলতানা পাখি (২৭), বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নওশাদ (৩৫), খলিল (৪৬), জুলেখা (৫৫), কুরবানের মা (৬০), ইদ্রিসের মা (৭৩), ভ্যান চালক শহীদের মা (৫৭), কবির মোল্লা (৫৫) সহ আরো বেশ কিছু শীতার্ত বয়স্কদের গায়ে যত্নসহকারে কম্বল পড়িয়ে দেন। এছাড়া কানাইপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে কাশিমাবাদ, রামখন্ড, আড়ুয়াডাঙ্গী, উলুকান্দা, রায়কাইল, খাসকান্দি, ভাটিকানাইপুর, শোলাকুন্ডু এলাকার যাচাই-বাছাই কৃত বিভিন্ন শ্রেণীপেশার শীতার্ত মানুষের মধ্যে ছায়ানীড়ের পক্ষ থেকে দ্বারেদ্বারে গিয়ে উন্নতমানের শীতবস্ত্র (কম্বল) পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আড়ুয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা নাদের হোসেন (৫২) এর বড় কন্যা শারীরিক প্রতিবন্ধী নাঈম সুলতানা পাখির জন্য শীতবস্ত্র (কম্বল) এবং শিক্ষা উপকরণ ধর্মীয় বই, খাতা, কলম সহ অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাখি শারিরীক, মানসিক সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেও হাল ছাড়েনি পড়ালেখার।
তিনি এখন উচ্চ মাধ্যমিকে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। অধম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রতিভা খুবই প্রসংশনীয়। পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে দায়িত্বশীল শক্তিবর্গের সহযোগিতা কামনা করেছে নাঈমা সুলতানা পাখি।
এ সময় কম্বল পেয়ে বয়স্ক শীতার্ত ব্যক্তিরা খুশি হয়ে বলেন, ‘আজ আমাদের খুব ভালো লাগতেছে। আমাদের মাঝে বাড়ি বাড়ি এভাবে কেউ কম্বল নিয়ে আসে না। ভাবিও নাই কেউ কম্বল নিয়ে এতো সকালে বাড়িতে চলে আসবে। তোমরা এসেছো আমাগো বাড়িতে, খুব ভালো লাগতেছে। আল্লাহ’র কাছে তোমাগো জন্য দোয়া করি।’
কম্বল পেয়ে দুপায়ে স্বাভাবিক শক্তি হারানো ৭০ উর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি মোঃ শহিদুল্লা বলেন, এইবার শীতি পরথম কম্বল পাইলাম। খুব ভালো হইছে। আমি দুয়া করছি আল্লায় তুমাগো মেলা ছুয়াব দিবি, আমাগো দিক ইটু খিয়াল রাইহো।
লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আহম্মদ সেখ আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, গরীবের দিহে আপনেরা চাইয়ে দেকলেন। রাইতে ইয়েলে ঘুম আহে না। কম্বলডা পাইয়ে আরাম পামু এহন। কম্বল নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তিদের এধরনের অভিব্যক্তির প্রকাশ ছিলো।
ছায়ানীড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনামুল হাসান মাসুম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন দূর্যোগে, আপদে-বিপদে আমরা সমাজের অস্বচ্ছল মানুষের পাশে দাড়িয়ে থাকি। কেউতো গ্রামের অস্বচ্ছল মানুষের মাঝে কম্বল নিয়ে আসে না, এবার ভেবেছিলাম! গ্রামের এসব মানুষকে দ্বারেদ্বারে গিয়ে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেবো এবং সেই মোতাবেক কাজও করে যাচ্ছি। আপনাদের দোয়া ও সহোযোগিতায় এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ইনশাআল্লাহ্
কানাইপুর(ফরিদপুর) প্রতিনিধি
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.