স্বজনপ্রীতি গড়ে উঠেছে পূর্ব কাজিচর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়-সভাপতি নকল


নানা অনিয়মে জর্জরিত ভোলা সদর উপজেলার ১৯৮নং পুর্বকাজীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্যালক প্রধান শিক্ষক, ভগ্নিপতি সভাপতি অন্যদিকে সহকারী শিক্ষিকা দুইজন আপন বোন।
এই স্বজনপ্রীতিতে গড়ে উঠা ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশার বিচ্ছিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নানা অনিয়ম চলছে।
একটি বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন কর্মকর্তা তেমন পা না রাখায় পারিবারিক সংসারের মতন জবাবদিহিতাহীন ভাবে পরিচালনা হচ্ছে এমন অভিযোগে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১৯৮নং পুর্বকাজীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭/৮ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে একজন গেস্ট টিচার (রহিমা)রয়েছে শ্রেনী কক্ষে পাঠদানরত।
সহকারী দুই শিক্ষিকা আপন বোন রাবেয়া ও খালেদা পান খাচ্ছেন আর গল্পে মশগুল শিক্ষার্থীহীন একটি কক্ষে। অপরকক্ষে দুই শিক্ষার্থী গুটি খেলছে । বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবু নাইম। তবে প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষিকা রাবেয়া।
লাইব্রেরিতে গিয়ে শিক্ষিকাদের পাঠদান রেখে গল্প করার বিষয় জানতে চাইলে তারা সোজাসাপটা বলেন ছাত্র ছাত্রী কম উপস্থিতি এবং প্রথম শিপ্ট ক্লাস ছুটির সময় হয়েছে তো তাই । এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষিকা রাবেয়া বলেন আমরা সরকারের নিয়মনীতি পুরোপুরি মানতে পারছিনা ।
প্রশ্ন ছিলো কেন নিয়মনীতি মানতে পারছেন না? উত্তরে রাবেয়া ও খালেদা দুই বোন (শিক্ষিকা) বলেন সব নিয়ম অনুযায়ী চলা যায়না। আপনাদের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কত? হিসেব দিলেন খাতা পত্রে ১৬৩ জন। কিন্তু উপস্থিতি কম কেন? উত্তরে জানিনা বলেই শেষ করলেন।প্রথম সিপ্টের সকল শ্রেনী কক্ষে মিলে জনেক দশ বারো ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও বিদ্যালয়টির জন্য বরাদ্ধ হয়েছে দেড় কোটি টাকার ব্যায়ে একটি ৪তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন।
১৫০ জন ছাত্র ছাত্রী উপবৃত্তি পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষিকা রাবেয়া । উপবৃত্তি গ্রহণ করা ছাত্র ছাত্রীরা কোথায়? এমন কথার কোন উত্তর মিলেনি ।
এ বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়েও রয়েছে আরেক অনিয়ম । জানাযায় বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ছিলেন আঃ খালেক নামের জনৈক ব্যাক্তি । শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকায় তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিত্ব করতে পারবেন না বিধান রয়েছে। এমন বিধানকে কারচুপির কৌশল আঁটা হয়েছে। সাবেক সভাপতি খালেক এর ভাই হাসান এর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দিয়ে সভাপতি পদ আঁকড়ে রেখেছেন খালেক । তবে এবিষয়ে খালেক বলেন আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকায় আমার ভাই হাসানের সনদ দিয়েছি ঠিক। কিন্তু আমি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করি।
কথিত এই সভাপতিকে প্রশ্ন ছিলো বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ছবি নেই কেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন এতো দিকে দেখা যাবে না ভাই, আমি অনেক কষ্ট করে দেড় কোটি টাকার একটি ভবন পাশ করিয়েছি ভবনটি হলে সব ঠিক করা হবে।
আপনারা ভাই ব্রাদার চা খরচ পাঠিয়ে দিবো। তিনি আরো বলেন আমি আজ ঢাকা যাবো। প্রধান শিক্ষক আমার ভগ্নিপতি আমি ঢাকা থেকে এসে তাকে সহ বসে কথা বলবো বলেও জানান আঃ খালেক । বিদ্যালয়ের অনিয়মের আখড়ার সংবাদ এড়িয়ে যাবার অনুরোধও করেন তিনি ।
এই বিদ্যালয়ের অনিয়ম এড়িয়ে যাবার বিষয়ে মুঠোফোনে অনুরোধ করেন মেদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনও। তিনি বলেন ১৯৮নং পুর্বকাজীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নাইম আমার খালাতো ভাই।
তার বিদ্যালয়ের অনিয়মের বিষয় একটু এড়িয়ে যান ভাই, সকল নিয়মনীতি আসলেই মানা যায় না । তবে আলমগীর সাহেবও চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ ও বিনিময় করার কথা জানালেন । প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি প্রধান শিক্ষক আবু নাইম, আলমগীর এবং সভাপতি (বিধিবহির্ভূত) আঃ খালেক এদের দাপটে অনিয়ম নিয়মে পরিনত হয়েছে?
প্রধান শিক্ষক আবু নাইম বলেন সাবেক সভাপতি আঃ খালেক মিয়ার শিক্ষার মান কম থাকায় হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দিলেও দায়িত্ব পালন করছে আঃ খালেক । এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন তিনি ।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিরিন সুলতানা বলেন সকল নিয়ম মানতে পারছেন না শিক্ষকরা এমন কথা বলার কোন সুযোগ নেই । তাদের সমস্যা থাকলে কর্তৃপক্ষ দেখবে । জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ছবি না লাগানোর কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন এই বিদ্যালয়টি আমার ক্লাস্টারের আওতায় না এটি আবু তাহের স্যারের ক্লাস্টারের আওতায়, তবুও আমি এখনি স্যারকে বলছি আশাকরি দ্রুতই সমস্যাটি সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি ।
ভোলা প্রতিনিধি।
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.