কবিতা-হঠাৎ গজব
কবিতা-হঠাৎ গজব
ইসমাইল হোসেন ফরিদ
সিনিয়র শিক্ষক ,ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
পাশের গাঁয়ের আলসে ফেলু
কে না তাকে চিনে?
আলসেমির মাত্রা তার
বাড়ছে দিনে দিনে।
পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে
গুণে বেড়ায় ঢেউ,
এক মূহুর্তও ফেলুর ছায়া
দেখেনা বাড়ির কেউ।
রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকে
ছেড়ে নাওয়া খাওয়া,
কুকুর গায়ে প্রস্রাব করলেও
দেয় না তাকে ধাওয়া।
পিতা তার ক্ষেপেছে ভীষণ
এই নাকি তার ছেলে?
ফেলুকে সে সামনে পেলেই
খাবে যেন গিলে।
সারাক্ষণই তার মা তাকে
মেরে যাচ্ছে ঝাড়ি,
অনেক রেগে, ভাবলো ফেলু
থাকবেনা আর বাড়ি।
” কি করেছি? একটু ঘুরে বেড়াই
এই কি আমার দোষ?
এই জন্য কি আমার উপর
খাটাও এত রোষ?
ঝাড়ি খেতে আর পারছিনা
ছেড়ে যাব বাড়ি,
চোখ যেদিক যায়, সেদিক যাব
দিবো সেথায় পাড়ি।
কিন্তু আমি গাঁয়ের বাইরে
কিচ্ছু চিনিনা যে,
ঘর ছেড়ে আজ বাইরে গেলে
লাগবোরে কোন কাজে?
এই দুনিয়ায় মা বাপ ছাড়া
আমার তো কেউ নাই,
কোথায় যাব? কী করব?
ভেবে নাহি পাই।
হোক না তা, জিদই বড়
আছে আমার রক্তে,
হাজার চেষ্টা করেও কেউ
পারবেনা তা রুখতে।”
রেগে মেগে ফেলু মিয়া
নেমে পড়লো পথে,
যাত্রাপথে দেখা হলো
তার এক বন্ধুর সাথে।
বললো সে,” কিরে ফেলু!
কোথায়রে তুই যাস?
বললো ফেলু,” এ গাঁয় থেকে
কাটবো কি আর ঘাস?
যাচ্ছি আমি বাড়ি ছেড়ে
যেদিকে চোখ যায়,
এমন জায়গায় যাব আমি
কেউ যেন না পায়।
কিন্তু আমি জানিনা যে
কেমনে সেথায় যাই?
কোন গাড়িতে উঠবো আমি
তাও জানা নাই।
জানো যদি তুমি, সানি
আমায় বলে দাও,
পথের দিশা পাই যদি, ভাই
ছাড়ব আমি গাঁও।”
“রেলগাড়িতে উঠবে তুমি
গিয়ে ভাইটাপাড়া,
আর কোনো পথ দেখিনা আমি
শুধু এ পথ ছাড়া।”
“কী বললি? রেলগাড়ি না?
এটা আবার কী?
এমন গাড়ি এই জীবনে
আমি দেখিনি।”
” বলছি আমি গাড়ির কথা
আমি যেটুক জানি,
উপর দিয়ে ওড়ে ধোঁয়া
নীচে পড়ে পানি।
বেশ লম্বা দেখতে এটি
রঙটা একটু লাল,
চড়বে তুমি এই গাড়িতে
দিয়ে একটা ফাল।”
ছুটলো ফেলু দ্রুতবেগে
ধরতে হবে গাড়ি,
ঘন্টা দুয়েক ব্যয় করে সে
দিলো এ পথ পাড়ি।
রাস্তার ধারে লালচে কোটের
এক ইংরেজ সাব,
সিগারেট টেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
করছিলো প্রস্রাব।
ভাবলো ফেলু যাচ্ছে মিলে
যা বলেছে সানি,
উপর দিয়ে উড়ছে ধোঁয়া
নীচে পড়ছে পানি।
“চড়তে হবে এই গাড়িতে
উপায় আমি জানি,
ফাল দিয়ে উঠতে হবে
বলে দিছে সানি।”
দূর থেকে দৌঁড়ে এসে
তার ঘাড়ে দিলো লাফ,
বোঝার আগেই হুমড়ি খেয়ে
পড়লেন ইংরেজ সাব।
হঠাৎ গজব আসবে এমন
ভাবেনি সে তা,
কোত্থেকে আসলো যে এই
খাস বাঙ্গালের ছা।
সুখের টান আর ত্যাগের সুখ তার
হলো লণ্ডভণ্ড,
এই জীবনে দেখেনি সে
এমন আজব কাণ্ড!
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.