চাকুরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ-দৈনিক ভোরের বার্তা
রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় চাকুরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্য কে আটক করেছে র্যাব–৩।
র্যাব জানায়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকুরি দেওয়ার নাম করে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় ও দুস্থ মানুষদের কে হয়রানি ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল চক্রটি । কিন্তু বাস্তবে তারা কোনো ব্যক্তি কে চাকুরি দিতে সক্ষম হয় নাই।
গত ৫ বছর যাবৎ এই চক্রটি ৫০ জন চাকুরি প্রার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রত্যেকেই আথিক লাভের আশায় এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে ।
মঙ্গলবার (৩১ মে) র্যাব -৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর সহ মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল হোতা মোঃ হেলাল উদ্দিন (৫১) ও তার সহযোগী মোঃ মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু (৪৭), মোঃ খন্দকার মারুফ (৩৭) , মোঃ আব্দুল কাদের রাজু (২৯) কে গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতারকৃত আসামীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ২৪ টি সিলমোহর,ভূয়া নিয়োগপত্র ১১ পাতা, নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র ৩ পাতা, ৮ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আসামীদের জিঙ্গাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে র্যাব জানতে পারে, গ্রেফতারকৃত মোঃ হেলাল উদ্দিন প্রতারণা ও জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা।সে বিভিন্ন লোকের কাছে নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার ওসি, আবার কোখনো এস আই পরিচয় দিত।
সে ভুক্তভোগীদের সাথে অত্যন্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কথার জালে ফাঁসিয়ে, চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। জালিয়াতি চক্রের প্রধান হিসেবে সে বিভিন্ন লোকের নিকট হতে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিত। চাকুরি প্রার্থী ভুক্তভোগীদের আথিক অবস্থানভেদে সে প্রাথী প্রতি পাঁচ লাখ থেকে নয় লাখ টাকা পর্যন্ত নিত।
আজ বুধবার (১জুন) দুপুর ১২ টায় রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ এর সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল মোঃ আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ ।
তিনি বলেন গ্রেফতারকৃত মোঃ মফিজুল ইসলাম লেবু এবং মোঃ আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকুরি প্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কে মোঃ হেলাল উদ্দিন এর কাছে নিয়ে আসতো। মূলহোতা হেলাল উদ্দিন বস সেজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের ইন্টারভিউ নিত।
পরবর্তীতে উবারের একটি গাড়ি ভাড়া করে, সে নিজের গাড়ি বলে পরিচয় দিত ভুক্তভোগীদের, এবং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে নিয়ে সে গাড়ি থেকে নেমে অফিসের ভিতরে প্রবেশ ও বাহির হয়ে চাকুরি প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আস্হা অর্জন করত।
অতঃপর বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিলমোহর ও উদ্ধতন কর্মকর্তার ভূয়া স্বাক্ষর সম্বলিত বিভিন্ন অফিস আদেশ এবং ভুয়া নিয়োগপত্র খামে বন্দি করে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিত। ভুক্তভোগীদের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য চাকুরির মেডিকেলের নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যেত।
প্রথমে তারা প্রতিশ্রুতি দিত যে, চাকুরি হওয়ার পর টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাতে চাকুরি প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিকট হতে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করত এবং ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার পূর্বের রাতে তারা বলত যে,আরো টাকা দিতে হবে,না হলে আগামীকাল চাকুরি কনফার্ম করা যাবে না। ভুক্তভোগীরা চাকুরি পাওয়ার আশায় তাদের চাহিদামত অগ্রিম টাকা প্রদান করতে বাধ্য হতো।
লে.কর্নেল মোঃ আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতারকৃত খন্দকার মারুফ উক্ত চক্রের মূল হোতা মোঃ হেলাল উদ্দিন এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। মারুফ কথা বলার মাঝেই চতুরতার সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ মহলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করে আর ও বিশ্বস্ততা অর্জনে মোঃ হেলাল উদ্দিনকে সহায়তা করতো।
লে.কর্নেল মোঃ আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, মোঃ হেলাল উদ্দিন বগুড়ার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করেছে।সে নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার অবসরপ্রাপ্ত ওসি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকত।ও মোঃ খন্দকার মারুফ এইচএসসি পাস।সে চতু্রতার সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং বিশেষ মহলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করে আর ও বিশ্বস্ততা অর্জনে মোঃ হেলাল উদ্দিন কে সহায়তা করতো।
মোঃ মফিজুল ইসলাম লেবু এবং আব্দুল কাদের রাজু একটি বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান হতে ডিপ্লোমা পাশ করেন। মোঃ মফিজুল ইসলাম লেবু এবং মোঃ আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকুরি প্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মোঃ হেলাল উদ্দিন এর কাছে নিয়ে আসতো । আসামিদের বর্তমানে কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। প্রতারণা ও জালিয়াতি করেই অথ আত্মসাৎই তাদের বর্তমান পেশা ।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাব এর এই কর্মকর্তা ।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পলক
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে