শরীয়তপুরে খাস সম্পদ বিক্রি করে খাচ্ছে এক যুদ্ধাপরাধী-রিপোর্ট সুমন খন্দকার
শরিয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গয়ঘর এলাকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত আব্দুল জব্বার (৭৫) এর বিরুদ্ধে ত্রিশ বৎসর যাবৎ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ জবরদখল, এলাকার নিরীহ বিভিন্ন লোকের সম্পদ জোরপূর্বক দখল, সংখ্যালঘুদের খুন, ধর্ষণ, নকল বিআরএস রেকর্ড তৈরি ও নকল ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ তৈরি করে, সরকারি খাস সম্পদ বিক্রি করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা বিগত প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ঘটে আসছে বলে দাবি করছেন এলাকার একাধিক ব্যক্তি। মামলা-হামলা সহ বিভিন্ন হয়রানির ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে তার বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
তার অপরাধ গুলোর মধ্যে এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ জবর দখল, এলাকার নিরীহ লোকদের জমি দখল, খুন, ধর্ষণ, যুদ্ধপরাধী, নকল কাগজ পত্রের মাধ্যমে সরকারি খাস সম্পদ বিক্রয়, শতবর্ষী রামমোহন পোদ্দার জমিদার বাড়ি (যা এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল) দখল ও তা ভেঙ্গে ইট, মূল্যবান কাঠ বিক্রি সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডর সাথে জড়িত। ভূমি সংক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তার ভূমি সংক্রান্ত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো রামরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এ যেন দেখার কেউ নেই। তবে তার এসব অপকর্মের সহযোগী প্রভাবশালী মহল সহ সরকারি দপ্তরের কিছু লোকজন জড়িত বলেও দাবি করেন এলাকার একাধিক ব্যক্তি।
ভূমিদস্যু ও যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত আব্দুল জব্বার ইতোমধ্যে নকল বিআরএসরেকর্ড ও নকল ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ তৈরি করে ২৩ নং গরঘর মৌজার ৭৯৫ নং দাগের সরকারি ২২ শতক খাস জমি থেকে দুটি দলিলে ১৪ শতক সম্পদ বিক্রি করে ২০২০ সালে। যা শরীয়তপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে হেবাবিল এওয়াজ নামক একটি দলিলে হানিফ মাঝি নামক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে। যাহার দলিল নং ২৮৯৪/২০২০।
মূলত নিকট আত্মীয় বা রক্তের সম্পর্ক যুক্ত কাউকে হেবা বা হেবাবিল এওয়াজ দলিল করে দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও, সরকারি খাস সম্পদ হেবাবিল এওয়াজ রেজিস্ট্রি করে দেয় হানিফ মাঝি ও তার স্ত্রী কে।
ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সংগঠন যেমন :- বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের দুই জন কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শৌলপাড়া ইউনিয়ন কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ’র সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি ও শৌলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সাবেক চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ ১২ জন সদস্য স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে বলা হয়েছে, তাদের জানামতে আব্দুল জব্বার সরদার একজন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী।
এছাড়াও এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান চৌকিদার বাদী হয়ে, গত ১৬ এপ্রিল-১০ তারিখে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল কোর্টে যুদ্ধাপরাধের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১/৭১। উক্ত মামলায় আব্দুল জব্বার সরদার দীর্ঘ ১০ মাস কারাভোগ করে জামিনপ্রাপ্ত হন।
এছাড়াও তার অপকর্মের বিচার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজসহ এলাকার ৪১ জনের স্বাক্ষর বিশিষ্ট একটি আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থায়।
এত কিছুর পরেও তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ড একটুও কমেনি। প্রশাসন লাগাম টানতে পারেনি তার অপরাধ কর্মকাণ্ডের। এ নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের যেন শেষ নেই। প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এলাকাবাসী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যুদ্ধাপরাধের মামলার বাদী বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান চৌকিদার বলেন, ৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে আব্দুল জব্বার সরদারের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মামলা করেছি। ঐ মামলায় সে জেল খেটেছে। বর্তমানে জামিনে আছে। আর্থিক কারণে মামলা চালিয়ে যেতে পারছিনা। কেউ সহযোগিতা করছে না। আমি চাই সরকার সরাসরি এ মামলার ভার গ্রহণ করে তার সঠিক বিচার করা হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমাস হোসেন ঢালী, বাবুল মাদবরসহ এলাকার অনেকে বলেন, জব্বার সরদারের সঠিক বিচার করে, এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল জব্বার সরদারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও সে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি বরং তাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত না করার জন্য বলেন।
শরীয়তপুরের আইনজীবী আনিস উদ্দিন তালুকদার পরিচয়ে, এ প্রতিবেদককে জানান, আব্দুল জব্বার সরদার কে যেন আর ফোন না দেয়া হয়। পত্রিকায় কিছু লিখার থাকলে যা খুশি লিখে দিতে বলা হয়। এ বিষয়ে আব্দুল জব্বার কোন বক্তব্য দিবে না বলেও তিনি জানিয়ে দেন।
ক্রেতা হানিফ মাঝি মুঠোফোনে জানান, জব্বার সরদার আমার রক্তের কেউ না। আমি তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে জায়গা কিনে নিয়েছি। এটা খাস সম্পদ কিভাবে ক্রয় করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ এ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে সরকারি জায়গা হলে সাব-রেজিস্ট্রার কিভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে।
নকল কাগজপত্রের মাধ্যমে সরকারি খাস জমি রেজিস্ট্রির দায় সংশ্লিষ্ট কেউ নিতে নারাজ।
চিকন্দীর সাবেক ভূমি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি এ বিআরএস ও ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ প্রদান করিনি। জব্বার সরদার এটা কোথা থেকে কিভাবে পেয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।
চিকন্দী ভূমি কর্মকর্তা (বর্তমান) মাহবুব উল্লাহ বলেন, উল্লেখিত দাগ-খতিয়ানটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এটা আমাদের রেকর্ড এর সাথে কোন মিল নেই। সে কিভাবে এটা পেয়েছে তা আমার জানা নেই।
দলিল লেখক মোঃ আব্দুল হক মুন্সী বলেন, বিক্রেতা আমার কাছে যে কাগজপত্র দাখিল করেছে, সে ভিত্তিতে আমি রেজিস্ট্রি করেছি। শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার এ, কে, এম রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার দলিল হয়ে থাকে, সব দলিল যাচাই করা সম্ভব নয়। আমার কাছে যে কাগজপত্র দিয
রিপোর্ট মোঃ সুমন খন্দকার
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.