মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় ওসি প্রদীপসহ দুজনের ফাঁসির আদেশ-দৈনিক ভোরের বার্তা
সকল জল্পনা কল্পনা শেষে মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় হলো আজ ৩১শে জানুয়ারী (2022) বাংলাদেশে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার বহুল আলোচিত মামলায় সোমবার কক্সবাজারের একটি আদালত পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ৬ জনের, মামলার অপর ৭ অভিযুক্তকে খালাস দিয়েছে আদালত, আদালতের বিচারক এই হত্যাকাণ্ডকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন, সোমবার দুপুরে কক্সবাজারে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় দেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়তে শুরু করেন। রায় ঘোষণার আগে দুইটার দিকে গ্রেপ্তার থাকা ১৫ জন অভিযুক্তকে কড়া পুলিশী পাহারায় আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়।
এদের মধ্যে পুলিশের বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশও ছিলেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই আদালতকে ঘিরে ছিল কড়া পুলিশী নিরাপত্তা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দেড় বছর পর আদালত আলোচিত এই হত্যা মামলাটির রায় দিল।
বিচারের রায় জানতে সকাল থেকেই কক্সবাজার আদালত চত্বরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেছেন, এই রায়ে তাদের প্রত্যাশার কিছু প্রতিফলন ঘটেছে।
তিনি বলেন, “মামলার পর থেকে আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল, মূল দুজন আসামীর মৃত্যুদণ্ড হবে, বাকীদের অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সাজা হবে। কিন্তু মামলার সাতজন আসামী যে খালাস পেল, এতে আমরা কিছুটা আশাহত।” তিনি বলেন, যখন মামলার রায় কার্যকর হবে তখনই তাদের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হবে বলে মনে করেন, তিনি এই মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, রায়ে তারা আংশিক সন্তুষ্ট। তবে মামলার পুরো রায় পাওয়ার পর সবকিছু দেখে তারপর তারা আদালতে যাবেন।
মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রানা দাশ গুপ্ত। তিনি বলেছেন, তাদের সামনে এখন উচ্চ আদালতে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই, সেটাই তারা করবেন। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের তল্লাশি চৌকিতে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা পুলিশের গুলিতে নিহত হন ২০২০ সালের ৩১শে জুলাই।
টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয় এই হত্যা মামলায়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। তখন পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত পুরো কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রায় দেড় হাজার জনকে বদলি করা হয়েছিল।
হত্যা মামলাটি করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তবে এই ঘটনায় প্রথমে পুলিশ টেকনাফ থানায় দু’টি এবং রামু থানায় একটি সরকারি কাজে বাধা দেয়া এবং মাদক আইনে মামলা করেছিল। পুলিশের সেই মামলাগুলোতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম এবং শিপ্রা দেবনাথকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
পুলিশের এসব মামলা নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। মেজর সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকেও পুলিশের মামলার প্রতিবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডেরে ঘটনার কয়েকদিন পর ২০২০ সালের ৫ই অগাষ্ট মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই হত্যা মামলায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। হত্যা মামলা এবং পুলিশের মামলাগুলোরও তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল র্যাব।
র্যাব হত্যা মামলায় চার মাস তদন্তের পর লিয়াকত আলী এবং প্রদীপ কুমার দাশ সহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম।
র্যাব একইদিনে পুলিশের মামলাগুলোরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল। আদালত পুলিশের তিনটি মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম এবং শিপ্রা দেবনাথকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এদিকে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যা মামলায় অভিযোগ পত্র গ্রহণ করে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর।
পরের বছর জুলাই মাসে হত্যা মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। অভিযোগ পত্র সাক্ষী ছিল ৮৩ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে