নগরকান্দায় তিন কোটি টাকার ব্রিজের পাটাতন ঢালাইয়ের সময়ই ভেঙ্গে পড়লো


ফরিদপুরের নগরকান্দায় তিন কোটি ৭৭ লাখ টাকার একটি নির্মাণাধীন ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুরে নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়ের মাঝিকান্দা–তালমার খালের ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজের পাটাতন ঢালাইয়ের সময় এ ঘটনা ঘটে।
তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নির্মাণাধীন ব্রিজ এভাবে ভেঙে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি কাজ করার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ব্রিজের তদাকরী কর্মকর্তা নগরকান্দা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. মিরান হোসেন বলেন, ৩৯ মিটার ব্রিজটির তিনটি পাটাতন (স্ল্যাব) করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রিজের দুই মাথার দুটি পাটাতন ঢালাইয়ের কাজ শেষে হয়েছে।
কিন্তু মাঝের পাটাতন ঢালাইয়ের জন্য দোতলা মাচা পাতা হয়। প্রথমে ১০ ফুট করে বল্লি (গাছের খুঁটি বিশেষ যা দিয়ে পাইলিং করা হয়) বসিয়ে একটি কাঠের মাচা পাতা হয়।
ওই মাচার ওপরে আবারও আট ফুট করে বল্লি বসিয়ে তার ওপরে আরেকটি মাচা পেতে মাঝের পাটাতন ঢালাইয়ের কাজ শুরু করি। পরে মাঝের স্ল্যাবের ঢালাইসহ দোতলা মাচা ভেঙে পড়ে। এখন পুনরায় আবার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্রিজের নির্মাণকাজ চলাকালে ঢাকা থেকে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) মো. বাদশা মিয়া পরিদর্শনে আসেন। তিনি এসে ব্রিজের পাটাতন ঢালাইয়ের জন্য যেভাবে মাচা পাতা হয়েছে তাতে আপত্তি জানান।
পিডি দোতলা মাচা পেতে মাঝের পাটাতন দ্রুত ঢালাই দেওয়ার নির্দেশ দেন। আমার ঠিকাদারী জীবনে দোতলা মাচা পেতে ব্রিজের পাটাতন ঢালাই কোনো দিন দেইনি, বা কাউকে দিতে দেখিনি। পরে পিডির নির্দেশমতো দোতলা মাচা পেতে ঢালাই দিতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটে। এখন আমার ব্যক্তিগত খরচে আবার ওই পাটাতন ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছি। এতে আমার অনেক টাকা লস হবে।
তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের শুরু থেকে নানা অনিয়ম করা হচ্ছে। ব্রিজের পিলারগুলোও বাঁকা হয়ে আছে। অথচ উপজেলা প্রকৌশলীকে কখনো সাইটে আসতে দেখিনি।
কাজ চলাকালে তদারকির অনেক অভাব ছিল। অথচ এখন হঠাৎ ব্রিজটি যখন ভেঙে পড়েছে, তখন বড় বড় অফিসার আসছেন। এখন আবার ভেঙে পড়া ব্রিজের কাজ তড়িঘড়ি করে সংস্কার করা হচ্ছে। এতে কাজের মান কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
নগরকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন ফোনে বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি। ব্রিজ ভেঙে পড়ার বিষয়ে পরে কথা হবে জানিয়ে তিনি এড়িয়ে যান।
বিশেষ সুত্রে পাওয়া তথ্যে স্টেজিং ভালো না করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। নিচের গোড়াটা যেভাবে করার দরকার ছিল সেভাবে হয়নি বিধায় এমনটা হয়েছে। এটা একজন ঠিকাদারের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ক্ষতির দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.