সালথায় পানির অভাবে কৃষকগন পঁচাতে পারছনা পাট-জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ
ফরিদপুরের সালথায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকগন। পানির অভাবে পাট কাটতে পারছেনা জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ। নেই পানি নেই বৃষ্টি, কৃষকের পাট নিয়ে তাই চিন্তার নেই শেষ।
সোনালী আশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর” যদিও এই স্লোগান একমাত্র ফরিদপুরের জন্য প্রযোজ্য কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর সোনালী আঁশের নামের জায়গায় ব্যাঘাত ঘটছে।
জেলার সালথায় উপজেলায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হলেও নদীনালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট পঁচাতে পারছেন না পাটচাষিরা।
একই পানিতে বারবার পাট পঁচানোর ফলে পাটের আঁশ ভালো হচ্ছে না বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। ফলে দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন পাটচাষিরা। পাটের দাম কম হওয়ায় চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকের কপালে।
অন্যদিকে এই এলাকার মানুষ জোর দাবি জানাচ্ছেন, ফরিদপুর শহরের টেপাখোলায় যে বেড়িবাঁধ রয়েছে সেখানে সুইজগেইটগুলো খুলে দিলে অনেক পানি এলাকায় ডুকে যেত। তাহলে আমরা কিছু টা পানি পেতাম। কৃষকেরা হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারতো।
উপজেলার কয়েকজন পাটচাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, চলতি বছর এ অঞ্চলে আষাঢ় মাস শেষ হয়ে এলো যেমন বৃষ্টির দেখা নেই তেমনই বর্ষা সেভাবে হয়নি। ফলে পাট গাছ বড় হলেও পানির অভাবে গাছ পুড়ে যাওয়ায় অপরিপক্ক পাট কেটে ফেলতে হচ্ছে।
আঁশের ফলনও কম হচ্ছে। সেইসঙ্গে নদীনালা,খাল-বিল,ডোবা, নালায় পানি না থাকায় পাটচাষিরা পাট পঁচাতে পারছেন না।
উপজেলার সালথা সদরের জাহিদ হাসান এমিলি, কালিপদ বিশ্বাস, মাঝারদিয়ার শাহাদত, ভাওয়ালের ফরিদ মোল্লা জানান, অল্প পানিতে অনেক পাট পঁচানোর ফলে পাটের আঁশ কালো হয়ে যাচ্ছে। এরফলে বাজারে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তারা। যে কারণে লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন পাটচাষিরা।
বাজারে বর্তমানে ১৮০০-২২০০ টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। তবে পাটের আঁশ ভালো না হওয়ায় ও কালো হয়ে যাওয়ায় পাটের দাম কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এক পাট চাষী জানিয়েছেন তার ১বিঘায় পাট চাষ করে সব মিলিয়ে তার ৩২০০ টাকা লস হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছরের তুলনায় সালথা উপজেলায় এবার পাট চাষ বেশি হয়েছে। সব মিলে (বিজেআরআই-৮) ৫০০হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এ বছর অন্যান্য জাতের মোট উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৯০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারি বলেন, এবারে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে পানি না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।পানি না থাকে কৃষকদের কে রিবোন রেটিং ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, সালথায় এবার ১৩৩৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হচ্ছে। যা মোট আবাদি জমির ৯২ শতাংশ। লক্ষমাত্রার চেয়েও আবাদ বেশি হচ্ছে অর্থকরী ফসলটির। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। রোগ ও পোকা-মাড়ক দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্ত:পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায় কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তাবৃন্দ।
তিনি আরও বলেন, এবার উপজেলায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে, এটা প্রাকৃতিক দূযোগ এখানে কারো কোন হাত নেই। তাছাড়া মানুষ যদি পুকুর ডোবা গুলো ভরাট না করতে তাহলে ও কিছুটা সেলো মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে পাট পচানো যেতো যদি কেউ এ রেবোন রেটিং ব্যবহার করতে চায় আমি সহযোগিতা করতে পারবো।
পাট পঁচানের এ সময় যে স্থানে বুক পানি থাকে থাকার কথা, এ মৌসুমে সেখানে বাচ্চারা খেলছে ফুটবল। যেখানে পুকুরে একটু পানি রয়েছে সেখানে জমে গেছে পাটের স্তুপ,কেউ কেউ আবার পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পঁচাচ্ছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.