ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বন্ধুরা মিলে বসন্ত বরণ ও আনন্দ ভ্রমন


ফরিদপুরের সালথা ১লা ফাল্গুন রোজ সোমবার ১৪ই ফেব্রুয়ারী ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে কিছু সংখ্যক বন্ধুরা মিলে বসন্ত বরণ ও আনন্দ ভ্রমন করা হয়।
ভ্রমনের মধ্যে ছিলো আলফাডাঙ্গা টিটা ভাসমান সেতু অবলোকন ও এবং সন্ধ্যায় শপ্তবর্ষী আমগাজ সাম্পান রেষ্টুরেন্টে ভোজন এবং বিভিন্ন যায়গা ভ্রমন করা হয়।
আমাদের বন্ধু মহলের উপস্থিত ছিলেন যারা– এস এম ইব্রাহীম, মোঃ মনির কাজী, মোশাররফ মাসুদ, সাইফুল ইসলাম, মোঃ মোরাদ হোসেন, মোঃ রুবেল হোসেন, মওদুদ আহমেদ, মোঃ হাসানুজ্জামান, ডাঃ রিপন, মোঃ নওয়াব আলী ও আবেদুল ইসলাম প্রমুখঃ।
একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন, অন্যদিকে ভালোবাসার রং- এই দুই মিলে প্রকৃতির প্রতিটি পরতে পরতে আজ ছড়িয়ে পড়েছে এক মোহময় সুবাস, যার আবেশে প্রত্যেক মানুষের মনে বেজে উঠেছে ভালোবাসার বারতা।
বসন্তের অপার্থিব সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত/ বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায়, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।’
ঋতুরাজখ্যাত বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেন ফিরে পায় তার চিরায়ত রূপ, সৌন্দর্য। শীতের শীর্ণতায় ঝরা পাতাগুলো ফাগুনের ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাসে অল্প অল্প বাতাসে উড়ছে। নবপত্রপল্লবে শোভিত হয়ে উঠছে বনরাজি, ফুলের বাগান। বাংলার শ্রীযুক্ত নৈসর্গিক প্রকৃতিতে ফাগুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে।
বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি যেন নতুনরূপে সাজবে। বসন্তের আগমনে অকপটে হৃদয়ে জাগে এ যেন মধুময় বসন্ত, ফুলেল বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত এবং আনন্দ, উচ্ছ্বাস, প্রফুল্লতা ও উদ্বেলতায় মন কেড়ে নেওয়ার বসন্ত, বাঙালি জাতিসত্তায় আনে মুগ্ধতার পরশ।
‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে,এতদিন পহেলা ফাল্কগ্দুন মানে বসন্তবরণের প্রথম দিন উদযাপিত হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। হলুদ পোশাকে, গাঁদা ফুল দিয়ে বাঙালি বরণ করে নেয় বসন্তের প্রথম দিনটি। তবে পরদিনই রং বদলে যেত। কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারি থাকে ভালোবাসা দিবস।
ভ্যালেন্টাইনস ডে। এ দিন শিশু থেকে যুবা- সবার হাতে হাতে লাল গোলাপ। পোশাকেও থাকে লাল-নীলের প্রাধান্য। প্রকৃতির কোলে নেমে আসে অনাবিল আনন্দ। তবে এবারই প্রথম বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। আজ তাই বসন্তের রং ভালোবাসার রঙে মিশে হবে একাকার। এ জন্যই প্রকৃতিও বুঝি বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার আবেগমাখা সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে।
ফাগুনের আগুন রাঙানো আজকের ভোরের আলোয় মিশে গেছে নিভৃত হৃদয়ের বার্তা। আজ আকাশে-বাতাসে ভাসছে অনাদিকালের সেই আকুল আকাঙ্ক্ষা- ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন/খুঁজি তারে আমি আপনায়/আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি/আমারি পিয়াসী বাসনায়।
কবি নজরুলের এই আবেগমথিত অনুভূতি আজ কোটি কোটি মানুষের অনুভূতি। হৃদয়ের দশ দিগন্তে আজ আলোর নাচন। সেই আলোয় দুলে দুলে উঠছে আত্মার গহিনে লুকানো ভালোবাসার কথা। গোপন প্রিয়াকে আজ অকপটে বলা যায়- ‘ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসি।’
ভালোবাসা শব্দের গভীরতা আর ব্যাপকতা সীমাহীন। ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়/যুদ্ধ আসে, ভালোবেসে/মায়ের ছেলেরা চলে যায়’- কী প্রগাঢ় শক্তি আর বিষাদ এই ভালোবাসার! গ্রিক পুরাণের হেক্টর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মনুষ্যত্বের প্রতি ভালোবাসার কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন দানবের মুখোমুখি।
যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। অনাদিকাল থেকে হৃদয়ের প্রগাঢ় আকাঙ্ক্ষা আর মমতা দিয়ে পরস্পরকে কাছে টেনেছে তারা। আবেগমথিত কণ্ঠে একে অন্যকে বলেছে- ‘জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি/তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি/যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি/যতো জানি ততো জানি নে।’
রোমান বিশ্বাসমতে, আজ প্রেমের দেবতা কিউপিড ‘প্রেমবাণ’ বা শর বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অনুরাগতাড়িত প্রেমিক-হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। আজ হৃদয় গহিনে তারাপুঞ্জের মতো ফুটবে চণ্ডীদাসের অনাদিকালের সুর- ‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া…।’
গল্প, কবিতা, গান আর উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে আর মানুষের মুখে মুখে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ। কেননা, ভালোবাসাই ধ্রুব।
ভালোবাসা দিবস কবে থেকে, কীভাবে শুরু হয়েছে- ইতিহাসের পাতায় তা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। এগুলোর মধ্যে বহুল প্রচলিত কাহিনি হচ্ছে- রোমান পাদ্রি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুদ দেন রোমের দ্বিতীয় ক্লডিয়াস।
তিনি কারাগারে বন্দি থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন চিকিৎসা করে জেলারের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এভাবে মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। মারা যাওয়ার আগে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান- ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’।
অনেকে মনে করেন, এই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। আরও একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুদ্ধের জন্য দক্ষ সৈনিক সংগ্রহের জন্য রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস যুবকদের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু তরুণ ভ্যালেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করে প্রেম ও বিয়ে করেন। ফলে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।
নিজস্ব প্রতিবেন
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.