শিক্ষক গবেষক ও উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন-দৈনিক ভোরের বার্তা


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ২৫ মে যোগদান করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।করোনা মহামারীর এক স্থবির পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই ছিলো তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। এছাড়া গবেষণায় উদ্যম সৃষ্টি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সচল করাও ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ।
কর্মমেয়াদের দুই বছরে কিভাবে তিনি এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছন তা দৈনিক ভোরের বার্তা-র এই প্রতিবেদন।
একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এসেছে গতিশীলতা:উপাচার্যের পদক্ষেপে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এসেছে গতিশীলতা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে থেকে আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলা প্রণয়ন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে একাডেমিক ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করে পাঠদান শুরু হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ডি-নথির (ডিজিটাল নথি) যুগেও প্রবেশ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
করোনা মহামারীর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়ন, অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে ভর্তি কার্যক্রম, আইকিউএসির মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ৫২টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে।
শুধুমাত্র ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আইকিউএসির মাধ্যমে ৩১টি প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়, যাতে ২ হাজার ৭১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নস্বরূপ প্রথমবারের মতো দুইজনকে প্রদান করা হয়েছে শুদ্ধাচার পুরস্কার।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। টেনসাইল মেমব্রেন স্ট্রাকচার প্রযুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে নির্মাণ করা হয়েছে খুলনাঞ্চলের প্রথম বৃহদাকার উন্মুক্ত ছাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি ডিসিপ্লিনে ইতোমধ্যে স্মার্ট ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরি এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত প্রশিক্ষণ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু অবকাঠামোর নির্মাণকাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
এর মধ্যে ১০ তলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, ৫ তলা আইইআর ভবন, ৪ তলা মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্ব ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, টিএসসি ভবন, জিমনেশিয়াম কমপ্লেক্স, আবাসিক ভবন, দৃষ্টিনন্দন মেইনগেট, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান: উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রিসার্চ ইনডোমেন্ট ফান্ড গঠন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ৮০০টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ এবং ১১০টি বেশি গবেষণা প্রকল্প শেষ হয়েছে।
একই বছরে পিএইচডি প্রোগ্রামে ৮৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গত দুই বছরে ৪ কোটি টাকারও বেশি অনুদান হয়েছে। যার মধ্যে গত এক বছরে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা গবেষণা অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষককে প্রদান করা হয়েছে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ইন্টারন্যাশনাল হাইফেক্টর জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশনায় রেজিস্ট্রেশন ফিস প্রদান, প্রত্যেক স্কুলকে প্রত্যেক বছর কমপক্ষে একটি জাতীয়/আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রত্যেক বছর প্রত্যেক ডিসিপ্লিনে কমপক্ষে একটি সেমিনার/কর্মশালা আয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য একটি গ্রিনহাউস স্থাপন। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ৭টি বিভাগসমূহের জন্য মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে স্থাপিত গবেষণা যন্ত্রপাতির আইএসও সার্টিফাইড করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে একটি ইন্টারন্যাশনাল হল তৈরি।
শিক্ষক, গবেষক ও উপাচার্য: উপাচার্য হিসেবে প্রশাসনিক ব্যস্ততার মাঝেও একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত ক্লাস নেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। সুন্দরবনের ওপর রয়েছে তার গবেষণার খ্যাতি। সুন্দরবনসহ দেশের বৃক্ষরাজি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য নিয়ে তার বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ছুটির দিন ও বিশেষ প্রয়োজনে গবেষণার কাজে সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে ছুটে যান তিনি। নিজেই সরেজমিনে ডাটা গ্রহণসহ গবেষণার কাজ করেন।
২০২১ সালের ১০ অক্টোবর বিজ্ঞানীদের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান লাভ করেন। খুবিতে কৃষি ও ফরেস্ট্রি প্রথম, দেশে চতুর্থ, এশিয়ায় ১৫১, বিশ্বে ৮২৫ তম স্থান লাভ করেন তিনি।
দুই বছর মেয়াদ পূর্তির প্রাক্কালে উপাচার্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন পূরণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে নানামুখী উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
খুবি প্রতিনিধি:
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.