কবিতা- চাকা
কবিতা– চাকা
লেখকঃ– ইসমাইল হোসেন ফরিদ
সিনিয়র শিক্ষক
ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
রিকশায় উঠতেই বললেন চালক,
“কোথায় যাবেন, স্যার?
এই বয়সে দূরে যাওয়ার
নিতে পারবনা ভার।“
ঠিক তখনই রিকশা থেকে
নেমে পড়লাম আমি,
আর কি রিকশা পাব এখানে
জানেন অন্তর্যামী।
চেয়ে দেখি লোকটি বৃদ্ধ
তাকালাম বারবার,
হ্যাঁ, এই বয়সে রিকশা চালানো
মোটেই সাজে না তার।
পা চালিত রিকশা তার
খুবই জরাজীর্ণ,
চালক শুধু বৃদ্ধ নয়
দেহও তার শীর্ণ।
থমকে গেলাম দৃশ্য দেখে
কেঁপে উঠলো বুক,
এক নিমিষেই হারিয়ে গেল
মনের যত সুখ।
একটু পরেই হঠাৎ করে
আসলো আমার মাথায়,
চেনা চেনা লাগছে তাকে
দেখেছি যেন কোথায়!
বললাম আমি,” কে আপনি?
মনে হচ্ছে চিনি।”
” আমায় আপনি চিনলেন না, স্যার? ”
বিনয়ে বললেন তিনি।
“আপনার বাসার সামনে আমরা
থাকতাম সারাদিন,
আপনার কাছে এই জীবনে
আছে অনেক ঋণ।
আপনি আছেন একই রকম
আমি তেমন নাই,
রোগে শোকে জীবন আমার
পুড়ে হলো ছাই।”
“কী হয়েছে বলুন আমায়?
পরিচয় নিব পরে,
খোলা মনে বলুন আপনি।”
বললাম শ্রদ্ধাভরে।
” থাক, স্যার! বলে লাভ কী!
আমি এখন যাই,
মনের দুঃখ মনেই থাকুক
বলার ইচ্ছা নাই।”
বললাম আমি, ” ছেলে মেয়ে
নাই কি আপনার?
এই বয়সে কেন নিচ্ছেন
এতো কষ্টের ভার?”
বলল সে, “আছে আমার
একটিমাত্র ছেলে,
ছেলে আমার চলে গেছে
মোদের হেথায় ফেলে।
আমার ছেলে অফিসার হয়েছে
বৌমাও অফিসার,
রিকশাওয়ালা বলে তারা
খোঁজ নেয় না আর।
এই রিকশা চালিয়েই তো
মিটিয়েছি পড়ার ব্যয়,
আজ রিকশাওয়ালা বলে তারা
দেয়না পরিচয়।
বই কিনতে বেশ কয়েকবার
নিয়েছি আপনার টাকা,
ভেবেছিলাম ঘুরে যাবে
আমার ভাগ্যের চাকা।
শিক্ষা দিয়ে ছেলে হারিয়েছি
মনে বড় কষ্ট,
চলে যান, স্যার। সময় আপনার
হচ্ছে অনেক নষ্ট।
গুমরে গুমরে কাঁদে ওর মা
বাসায় থাকলে একা,
ভাগ্য আমার ঘুরেনি, স্যার
ঘুরছে রিকশার চাকা।”
দেখলাম আমি চোখ দুটি তার
করছে ছলছল,
দৃশ্য দেখে আমার চোখেও
এসে গেল জল।
কাছের ভাড়া পেয়ে সে
চলল ধীরে ধীরে,
বুকে ব্যথা নিয়ে আমি
আসলাম ঘরে ফিরে।
দৈনিক ভোরের বার্তা
About Author
Leave a reply
You must be logged in to post a comment.
কবিতা: অনুতপ্ত হতে হবে