করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ে চরফ্যাসনে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

সারা দেশের ন্যায় ভোলার চরফ্যাসনে দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার না থাকায় জীবন যাত্রায় পিছিয়ে তারা। চরফ্যাসনে প্রায় ১০ হাজার এর মত দলিত জনগোষ্ঠী রয়েছে।
তাদের পরিচালনায় একটি সর্বস্মতিতে কমিটি আছে। কমিটির সভাপতি বিপ্লব কমল ও সম্পাদক অশোক শাহ। সভাপতি বিপ্লব কমল ও সম্পাদক অশোক শাহ জানান, করোনায় আমাদের দলিত জনগোষ্ঠী জীবন যাত্রা হুমকির মধ্যে পরে। কর্মহীন হয়ে, সমাজে দলিত গোষ্ঠী কোথাও অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। তাই আমাদের জন্য সরকার ও সামাজিক সংস্থা গুলির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার।
অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও চরফ্যাসনের এম.পি জনাব আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় দলিত জনগোষ্ঠীর সংগঠনের মাধ্যমে নিম্নোক্ত প্রাপ্তি :
১। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের মাধ্যমে ৪৮০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি তৈল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি লবন এবং ১ কেজি পিঁয়াজ বিতরণ করা হয়।
২। চরফ্যাসনের পৌর মেয়র এর মাধ্যমে ৪৮টি পরিবারের মাধ্যে ভিজিএফ কার্ড বিতরণ, অসহায় ৩৫ জনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ।
৩। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে দলিত ১২৫টি পরিবারের মধ্যে শিশুদের মধ্যে শিশু খাদ্য সহায়তা প্রদান। এছাড়াও দলিল সংঘঠনের মাধ্যমে শিশু ও বয়স্কদের সার্বিক সহায়তা করা হয়।
৪। চরফ্যাসন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার মাধ্যমে ৪০টি পরিবারের মধ্যে কৃষি বীজ এবং ৩৫ জনের মধ্যে মালটা চারা বিতরণ করা হয়।
৫। চরফ্যাসন বন বিভাগ থেকে ৪৮০টি ফলজ ও বনজ চারা বিতরণ করা হয়।
৬। দলিত গোষ্ঠীর জন্য ১২৮ জনকে বিশেষ বয়স্কভাতার অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ গ্রহণ।
৭। চরফ্যাসন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দলিত প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ১০ জনকে হুইল চেয়ার বিতরণ।
৮। দলিত সংগঠন তাদের মানব সেবায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করে আসছে।
এছাড়াও মাননীয় এম.পি মহোদয়ের ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তা, উপজেলা পরিষদ নির্বাহি কর্মকর্তা ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে চরফ্যাসনের দলিত গোষ্ঠী বিশেষ সহায়তা পেয়েছে বলে সংগঠনের নেতা বিপ্লব কমল জানায়।
এছাড়াও দলিত গোষ্ঠীর প্রত্যাশা :
আর্থ-সামাজিক সকল বিবেচনায় তারা দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এই অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাজেটে ধারাবাহিকভাবে পৃথক ও সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন এবং দরিদ্র হিসেবে বাজেটে এই জনগোষ্ঠীর দাবি সর্বাগ্রে বিবেচনার দাবিদার।
বিশেষত, আবাসন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে দলিতদের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্রয়োজন। বিগত অর্থ-বছর গুলোতে বাজেট প্রণয়নকালে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণের নিয়মতান্ত্রিক দাবির বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে তারা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে দলিত, হরিজন, বেদে এবং হিজরা সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরেও ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছিলো।
এছাড়াও দলিত জনগোষ্ঠীর আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নেও ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিন শহরাঞ্চলের দলিত জনগোষ্ঠীর আবাসনের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যা সঠিক ভাবে সম্পাদন করা প্রয়োজন।
বিভিন্ন অঞ্চলের মতো দলিতদের একটি অংশ পৌরসভা ও ইউনিয়ন গুলোতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। ঐ অঞ্চলের দলিত জনগোষ্ঠীর বসবাস মূলত কলোনিভিত্তিক ও খাস জমিতে।
এ অঞ্চলের দলিত জনগোষ্ঠীর পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দাবী যাতে কলোনীভিত্তিক ও খাস জমিতে তাদের জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়।
দলিত জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার জন্য অধ্যায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা। এর মধ্যে কারিগরী, কম্পিউটার, গো পালন, পেশা ভিত্তিক, দর্জি ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করণ।
কামার, কুমার, তাতী, জেলে, বেদে, ডোম, মুচি, সুইপার, দলিতদের জন্য আবাসন বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে চাকুরিতে নিয়োজিত থাকা বা না থাকার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে সকলের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।
কারণ দলিতদের সকলের চাকরির নিশ্চয়তা নেই এবং অস্পৃশ্যতার কারণে কলোনীর বাইরে তাদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া দলিতদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও পেশাগত কারণে একসাথে থাকা বাঞ্চনীয়।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দলিত সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সকল সুবিধা, দায়-দায়িত্ব পালনের অগ্রাধিকার প্রদান করা প্রয়োজন।
মনির আসলামী, ভোলা প্রতিনিধি।