আপনার জানা দরকার ই-কমার্স কি এবং ইভ্যালির কার্যক্রম

ই-কমার্স কি ঃ সোজা বাংলায় যেকোন পণ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট বিক্রি করাকে বুঝায়।
মূল্যছাড় বা ডিসকাউন্ট প্রতিষ্ঠান ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বা অধিক বিক্রির জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কম রাখে। এখানে অধিক বিক্রির মাধ্যমে বৃহৎ লভ্যাংশ অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সাবসিডি বা ভর্তুকিঃ প্রতিষ্ঠান তার পন্য বেশি বিক্রির জন্য বা নিজের বাজার তৈরি করার জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে।
মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিংঃ যেকোন ব্যাবসায় মার্কেটিং লাগেই। সেটা স্বল্প সময়ের জন্য হোক আর দীর্ঘ সময়ের জন্য হোক। কিন্তু আপনি যখন ব্যাবসায় দীর্ঘ সময় নিয়ে ব্যাবসা করবেন সেখানে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং সব থেকে বড় ইস্যু।
এবার আসি ই-ভ্যালি নিয়েঃ ইভ্যালির বিজনেস স্ট্রাটেজি পুরোটাই উল্টা । তারা একটু ভিন্ন ভাবে এগিয়েছে। সাধারনত বাংলাদেশে ই-কর্মাসের যাত্রা ২০১০-২০১২ সাল এর দিকে হবে। কিন্তু দারাজ আসার আগ অবদি কেউ তেমন আশা জাগানো কিছু করতে পারেনি। সে যাই হোক্ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ই-ভ্যালি তাদের ব্রান্ডিং এ গুরুত্ব দেয়। অনেকেই মার্কেটিং এর ভাষায় ই-ভ্যালির মার্কেটিং কৌশলকে গেরিলা মার্কেটিং বলে থাকেন। এখানে ইভ্যালি সফল কারন তারা শহর থেকে গ্রাম র্পযন্ত সব স্তরে তাদের নাম জানান দিতে স্বক্ষম হয়েছে।
প্রাইস পলিসি/নীতিমালাঃ সব থেকে আলোচিত বিষয় বর্তমান সময়ের। ইভ্যালির বক্তব্য হচ্ছে, তারা সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য সরাসরি গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করে। এখানে তারা একটা ভালো মুনাফা করে। তবে ই-ভ্যালির সি.ই.ও বলছেন, তিনি বাইক বা বেশী দামি পণ্যে সাবসিডি দিয়ে থাকেন। ধরুন, ওয়ালটন একটি মোবাইল ৩০ টাকায় বানালো এবং ই-ভ্যালি সে মোবাইল ১০০ টাকায় বিক্রি করলো (যা ওয়ালটন ফিক্সট করা)। এখানে ই-ভ্যালি ৭০ টাকা ব্যাবসা করলো। এখানে ওয়ালটন কোন খরচ ছাড়াই তাদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে আবার অন্যদিকে ই-ভ্যালি তার মুনাফা নিচ্ছে। (উইন- উইন সিচুয়েশন)
এবার আসি ক্যাশব্যাক অফার নিয়েঃ ক্যাশব্যাক অফার পৃথিবীর সব দেশের ই-কমার্স ই দিয়ে থাকে। তবে ই-ভ্যালি মনে হয় একটু বেশী ই দিয়েছে। এখানে তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা কিছু টাকা সাবসিডি/ভর্তুকি দেয়। আর কিছু অংশ অন্য প্রফিটের অংশ হতে নিয়ে এসে ব্যালেন্স করে। এটা একটা গাণিতিক সমিকরন যা সংস্লিষ্ট ব্যক্তি র্বগ ভালো বলতে পারবেন।
ডেলিভারিঃ যেহেতু ই-ভ্যালির নিজস্ব কোন পণ্য নেই সুতরাং এখানে পণ্য ডেলিভারির বিষয়টা ৯০% ডিপেন্ড করে পণ্যের সাপ্লায়ারের উপর। তবে এখানে ই-ভ্যালির এটা নিশ্চিত করা উচিৎ পণ্যের স্টক কি রকম আছে এবং নির্ধারিত কোটা পূরন হবার পর আর নতুন অর্ডার না নেওয়া। সে যাই হোক, আশে পাশের সহকর্মী বা বন্ধু বান্ধব কারো কাছ থেকে শুনিনি যে, তারা তাদের পণ্য হাতে পায়নি। হ্যাঁ এটা সত্য হয়তো সময় বিলম্ব হয়েছে। এখন আপনিই বলেন, যেখানে আপনি কারো কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা ডিস্কাউন্টে পণ্য পাচ্ছেন। সো এটুকু তো সহ্য করা লাগবেই।
এম.এল.এম/ডেস্টিনিঃ এম.এল . এম হলো মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং সিস্টেম যেখানে সরাসরি পন্য গ্রাহকের নিকট বিক্রি করা হয় । কিন্তু যিনি বিক্রি করেন তার একাউন্ট এ একটা নির্দষ্ট কমিশন যোগ হয়। এই আইডিয়াটা নিষিদ্ধ নয় কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে পন্য বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যখন অলৌকিক কিছু বিক্রি করা হয়, তখন সেখানেই সমস্যা। যাই হোক, ডেসিটিনির মতো নিশ্চই ই-ভ্যালি ডিপোজিট কালেকশন করেছে বলে আমার মনে হয় না।
সীমাবদ্ধতা বনাম সাংবাদিকতাঃ এটা সবাই জানে যে, প্রতিটা ব্যাবসায় কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটা থাকবেই্ । ই-ভ্যালি নিশ্চই এর বাহিরে নয়। এখন আপনি হুট করে চাইলেই তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে বলতে পারেন সে অধীকার সবার ই আছে। কিন্তু এটা কোন বিচক্ষনতা বলে মনে হয়না। আন্দাজ বা অনুমানের ভিত্তিতে আপনি কাউকে অপরাধী সাবস্ত করতে পারেন না। বিচক্ষণ হিসেবে আপনার আমার উচিৎ সম্ভাবনাকে গুরত্ব দেওয়া। আর কোন ভুল বা সমস্যা দেখলে সেটা সমাধানের সুযোগ দেওয়া। যা ই-ভ্যালিকে দেওয়া হয়নি। যেহেতু এটা একটা র্স্টাটআপ, তাকে আরো সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
পরিশেষেঃ অর্থনীতিতে নতুন নতুন উদ্যোগতা না তৈরী হলে, একসময় বেকারত্ব এতো বৃদ্ধি পাবে যে, তখন আর কুল, কিনারা পাওয়া যাবে না। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা করলে, হয়তো এ সম্স্যা আর থাকবে না । আর প্রতিযোগিতা কমিশন ঠিক ভাবে কাজ করলে বা বাজার মনিটিরিং করলে হয়তো অসম বা আকাশ পাতাল মূল্য নির্ধারন বা এলোপাথারি প্রতিযোগিতার মানসিকতার অবসান ঘটবে। পরিশেষে বলবো , হুজুগে কান না দিয়ে, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভাবে সব কিছু তদন্ত করে সমাধান করুন। বর্তমানে ই-ভ্যালিতে ৩৫০০+ লোকের কর্মসংস্থান। আশা করি এটা বাড়বে এবং ই-ভ্যালি ই-কর্মাস ব্যবসায় একটা চমৎকার অবস্থান তৈরী করতে পারবে। আর যদি আবেগে এমন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আর ভবিষৎ উদ্যোগতা হবার সাহস কেহ করবে না। যা অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকিসরুপ।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। গঠনমূলক সমালোচনা করেবন আশা করি।
এস, এম আবুল হাসনাত
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (বিডিজবস)
আপনি ও লিখুনঃ প্রকাশ করব আমরা। যে কোন বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের লিখে জানাতে পারেন feature@dainikbhorerbarta.com এ।