রজব মাসের তাৎপর্য ও আমল-দৈনিক ভোরের বার্তা

পবিত্র কুরআন মাজিদে বর্ণিত সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে একটি মাস হল রজব মাস।
এ মাস আসে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। তাই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য গুণের একটি হল বান্দার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করা।
গুনাহগার বান্দাকে বিভিন্ন উসিলায় ক্ষমা করেন। মহান আল্লাহ তায়া’লা তার সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করে বিভিন্ন ক্ষণে বিশেষ ফজিলত ও বরকত রেখেছেন; আর সেই সব ক্ষণগুলোতে ইবাদতে অফুরন্ত প্রতিদান দেয়ার ঘোষণা করেছেন। এ কারণে, অন্যান্য মাসের মতই রজব মাসেও বান্দাদেরকে ইবাদাতে উৎসাহদদীপ্ত তৎপরতা দেখা যায়।
গত শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সূর্যাস্তের পর থেকে পবিত্র এ রজব মাস শুরু হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে পুরো আরবে বছরের মধ্যে চার মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকত। মহিমান্বিত রজব মাসে আরবে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। হজরত রাসূল (সা.) সঙ্গী-সাথিদের রজব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- রজব মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি। হযরত মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাস সম্পর্কে খুব গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলে তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন ও আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’- আল মুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯
আলেমরা বলেছেন, আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য হলো, এসব মাসে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তওফিক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গোনাহ পরিহার করা সহজ হয়।’- আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ৩/১১১
মাসটির পুরো নাম ‘রজবুল মুরাজ্জাব’ বা ‘আর-রজব আল-মুরাজ্জাব’ হলেও এটি রজব মাস নামেই বেশি পরিচিত। মাসটির অর্থগত তাৎপর্যও রয়েছে। ‘রজব’ শব্দের অর্থ হলো সম্ভ্রান্ত, মহান বা প্রাচুর্যময়। আর ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ ‘সম্মানিত’। সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায় ‘প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস’।
মর্যাদার এ মাসটিকে মহান আল্লাহ তাআলা যাবতীয় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘আল্লাহ তাআলার আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই ১২ মাসে বৎসর হয়। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো ‘রজব মুদার’, যা জুমাদাল উখরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (মুসলিম)
তাছাড়া রজব ও শাবান হলো পাশাপাশি দুটি জোড়া মাস। মাস দুটিকে একত্রে রজবান বা রাজাবাইনও বলা হয়। তাই বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া-ইসতেগফার ও রোজা রাখার মতো আমল ইবাদত করে এ দুই মাসে নিজেদের প্রস্তুত করার উপযুক্ত সময়।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলেকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি।
তাই আমরাও যদি এই রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ্য রাখ আমি যেন আগত রমজানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ইবাদত-বন্দেগী, দানখয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব পুণ্য কর্ম বেশী বেশী করতে পারি।
এছাড়া হজরত রাসুল করিম (সা.) শাবান মাসেও অনেক বেশি ইবাদত করতেন আর তিনি (সা.) রমজান ছাড়াও প্রতি মাসে নফল রোজা রাখতেন আর বিশেষ করে রজব মাসে।
আমরাও যদি মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ি প্রতি মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখি তাহলে রমজানের রোজা আমাদের জন্য আরো সহজ হবে।
এছাড়া আমরা যদি মনের সব দূর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের সব ইবাদত বন্দেগী হবে প্রশান্তিময়।
তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে এই রজব মাস থেকেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করে নেই। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র রজব মাসের তাৎপর্য বুঝার এবং এর উপর আমল করার তৌফিক দান করুক, আমিন।
হাফেজ মাওলানা মো. সাখাওয়াত হোসেন