আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-দৈনিক ভোরের বার্তা

“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।“- সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।আর মানুষ হিসাবে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে কিছু মানবিক গুণাবলি যেমন থাকে তেমনি কিছু মানবিক অধিকারও থাকে।আর এই অধিকার সমূহকে বলে মানবাধিকার।
মানবাধিকার শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুইটি শব্দাংশ পাওয়া যায়। মানব ও অধিকার।মানবাধিকার শব্দের অর্থ একজন মানুষের ন্যায় সঙ্গত দাবী যা জন্মগ্রহনের পর না চাইলেও পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র ও অান্তর্জাতিক সংস্থা দিতে বাধ্য।
মানুষের মধ্যে মর্যাদার কোনো পার্থক্য হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার।
ও ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার, জীবনরক্ষণ ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সংঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার, সৎ পথে উপার্জনের অধিকার,কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশির অধিকার।
এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার ইত্যাদি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে স্থানীয়,জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে।অর্থাৎ মানব সমাজের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার।
এছাড়া অন্যভাবে বললে,মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির সদস্যদের আচার-আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক আইনের সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ/বিষয় হিসেবে ধরা হয়।
অন্যকথায় বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য মানুষের যে সকল অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত তাকে মানবাধিকার বলে।
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য ধরনের অধিকার । মূল্যবোধ যেমন নিজে চর্চা করতে হয়,অন্যকে চর্চা করতে উদ্ধুদ্ধ করতে হয়, মনের ভিতর লালন পালন করতে হয় তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকার নিজে ভোগ করা, অন্যকে ভোগ করতে দেওয়া নিজেচর্চা করা, অন্যকে চর্চা করতে উৎসাহিত করাএবং নিজে লালনপালন করা ও অন্যকে লালনপালনে উদ্বুদ্ধ করা।
তবে এমন কোন অনাধিকার চর্চা করা যাবে না যা অন্যের ক্ষতি ও অশান্তির কারণ হয়। মানবাধিকার সকল দেশে এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদিও অধিকার বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝানো হয় তা এখন পর্যন্ত একটি দর্শনগত বিতর্ক রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয় সমূহ এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে।যখন দেখা যায়, মানুষের অধিকারসমূহ আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানির কারণে বার বার লংঘিত হয়।
মানব অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে-১. পরিবার ও সমাজ২.রাষ্ট্র এবং ৩. আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ।
অর্থাৎ ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।বর্তমান বিশ্বে Human Rights শব্দটি বহুল আলোচিত,সমালোচিত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার প্রারম্ভ থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক-বিতণ্ডা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
একদিকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রভাবশালী শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকার গুলো অবলীলায় লংঘন,হরণ ও দমন করছে। আর অপেক্ষাকৃত অনাগ্রসর রাষ্ট্র গুলোর সাথে অগ্রসর রাষ্ট্র গুলোর বিমাতা সুলভ আচরণ মানবাধিকারকে একটি খেলার বস্তুতে পরিণত করেছে।
মানবাধিকার দিবস জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে প্রত্যক বছরের ১০ ডিসেম্বর তারিখে পালিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ সাল থেকে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এছাড়াও, ‘সার্বজনীন মানব অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাকে’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ তারিখকে নির্ধারণ করা হয়।
সার্বজনীন মানব অধিকার ঘোষণা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ অর্জন।”আন্তরিক মানবাধিকার দিবস”- বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, উন্নয়ন সংস্থা, রাষ্ট্রীয়ভাবে ও অান্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পালন করলেও সঠিকভাবে চর্চা ও রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে একাবিংশ শতাব্দীতে এসেও অধরাই থেকে যাচ্ছে।
তাই মানবাধিকারের মত সংবেদনশীল বিষয়টা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চিন্তা করা সময়ের দাবী মাত্র।
প্রতিনিধি আলিফ হাসান ঈশ্বরদী পাবনা।