কি রোগ জানা নেই,৭ বছরে ৬৬ বার অপারেশন

মাত্র ১২ বৎসর বয়স থেকে হঠাৎ করে শরীরের কোনো কোনো অংশ ফুলে যেতে শুরু করে। এই ফোলা ভাব থাকে মাসের পর মাস। এখন বয়স ১৯। এই সাত বছরের মধ্যে তার ফুলে যাওয়া অংশের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার ৬৬ বার অপারেশন হয়েছে। এর মধ্যে একবার এমন অবস্থা হয়েছিল যেখানে তার একটি পা কেটে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। এই তরুণীর নাম শার্লট এভান্স।
ছোটকালে এই তরুণীর কোনো সমস্যাই ছিল না। নাচতে ভালবাসতেন। প্রায় প্রতিদিনই নাচতেন। থিয়েটারেও নাচের অনুষ্ঠান করতেন। তারপর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
একদিন নিতম্বে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। নিতম্বে ভেতরের এক জায়গায় বিচির মতো কিছু একটা অনুভব করেন এভান্স। ব্যথা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক পর্যায়ে টের পান তার সব আঙুল ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। চিকিৎসকরা এটা দেখে বলেন, তার ‘কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম’ হয়েছে। সাধারণত শরীরে ব্যথা পেলে এটা হয়। কিন্তু এভান্সের কেন এটা হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।
হাত এবং পায়ের মাংসপেশিগুলো বিশেষ এক জায়গায় ফ্যাসিয়া নামের এক ধরনের কোষ দিয়ে আটকানো থাকে। এই জায়গাগুলোকে বলে ‘কম্পার্টমেন্ট’। কোনো কারণে এই কম্পার্টমেন্টের ওপর চাপ বেড়ে গেলে ‘অ্যাকিউট কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম’ দেখা দেয়।
হাসপাতালে ফ্যাসিওটমির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। মূলত জায়গাটিতে কেটে ফুটো করে চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়।
শার্লট এভান্স বলেন, ‘এই পর্যায়ে আমার শরীরে প্রথমবার অপারেশন করা হয়। তারা আমার মাংসপেশিতে কেটে ফুটো করে। এবং কয়েকদিন ধরে সেই ফুটো খুলে রাখা হয়। এরপর চাপ কমে গেল সেই কাটা জায়গা জুড়ে দেয়া হয়। ওই অপারেশনের পর থেকে আমার সমস্যাও বাড়তে থাকে।’
‘একবার আমাকে একটানা সাত মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। এ সময় আমার মা অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি টানা সাত মাস হাসপাতালের চেয়ারে রাতে ঘুমিয়েছেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগে যে সময়টুকু ছিলাম তখন মনে হতো ডাক্তাররা আমার জন্যে তেমন কিছু একটা করছেন না। এরপর তারা আমাকে বলতে থাকলেন, আমার আসলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তখনও আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা বার বার করে ফুলে উঠছিল।’
‘আমার বয়সীদের সঙ্গে মেলামেশায় অসুবিধা হচ্ছিল। আমার অভিজ্ঞতাও ছিল কম। আমার বয়সের টিনএজাররা যা কিছু করে আমি তার কিছুই করিনি। শেষপর্যন্ত আমাকে যখন হাসপাতালে বড়দের ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হলো তখন পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন এলো। এর কারণ, ডাক্তাররা আমাকে নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা চালানোর সুযোগ পেলেন’ বলেন শার্লট এভান্স।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে আবার পা ফুলে যায় এভান্সের। নিয়মিত চিকিৎসার আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। পায়ে পালস ছিল না তার। চিকিৎসক জানালেন, পা কেটে ফেলতে হবে। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান এভান্স। পা আর কাটা লাগেনি। চিকিৎসক জানান, আর এক ঘণ্টা দেরি হলে পা ঠিকই কেটে ফেলতে হতো।
কাটা শরীর নিয়ে কটু কথা বলে লোকজন।তবে কাটা শরীর নিয়ে শারীরিক যন্ত্রণাতো রয়েছেই, নানা কটু কথাও শুনতে হয় তাকে। এজন্য একবার আত্মহত্যার চেষ্টায়ও করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে শার্লট এভান্স বলেন, ‘প্রতিবার অপারেশনের পর আমার শরীরে কাটা দাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। লোক মনে করে আমার মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে আমি নিজেই নিজের দেহ কেটে ফেলি। কিছুদিন আগে হাসপাতালের লিফটে এক লোক আমাকে বলে আমি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছি। করোনাভাইরাসে যখন লোকে মারা যাচ্ছে তখন আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি।’
চলতি বছর মোট আটবার শরীরের কোনো না কোনো অংশ ফুলে গেছে এভান্সের। একই সাথে অন্যান্য সমস্যাও বাড়ছে। বয়স কম থাকলে ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেত, এখন সময় বেশি লাগে।
শার্লট এভান্স বলেন, ‘এখন আমার নতুন চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এই প্রথম নতুন ওষুধে কিছুটা ফল হচ্ছে। ফুলে যাওয়ার ঘটনাও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার সমস্যাটা ঠিক কোথায় তা ডাক্তাররা এখনও ধরতে পারছেন না। এই ওষুধ কেন এবং কীভাবে কাজ করছে তারা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছেন না
আমি যতটুকু জানি তারা সারা দুনিয়া তন্ন তন্ন করে আমার মতো আরেকটি রোগী খুঁজে বরে করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা পাননি। তারা অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বিবেচনা করেছেন। কিন্তু সমস্যার মূল কারণ যখন জানা যায় না, তখন সঠিক চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।’
এখন শারীরিক সমস্যা শুরু হলে বাসাতেই থাকেন এভান্স। পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে বা অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে যান না। বাসায় নড়াচড়া করার ব্যাপারে মা তাকে সাহায্য করেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ